‘দেয়াল’ মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রার্থী হতে চান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই

77

আগামী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত। ইতোমধ্যে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কে হচ্ছেন সেটা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ঐক্যের সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় সম্ভাবনা ছিলো একক প্রার্থীর। কিন্তু মেয়র পদে তারা দুজনেই প্রার্থী হতে চান। এতে ঐক্যের বন্ধনের মধ্যে ‘মেয়র প্রার্থী’ দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে সন্দিহান বিএনপি।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ বা মতানৈক্য নতুন কোনো বিষয় নয়। এ পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই মেরুতে অবস্থান নেয়া অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে যখনই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি হয়েছে, তখনই ভালো খবর পেয়েছে নগর বিএনপি। সর্বশেষ ২০১০ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী করার পেছনে ছিলো এই শক্তি। তখনকার নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়। যদিও নির্বাচনের আগে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে শাহাদাত হোসেনের মনস্তাত্তিক দ্ব›দ্ব ছিলো। তবে প্রার্থী ঘোষণার পর একযোগে কাজ করে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনেন তারা। বর্তমান নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের মধ্যেও বিরোধ ছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যের বন্ধনে আসেন তারা। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জন্য দুইজনের অনুসারীরাই কাজ করেন ঐক্যবদ্ধভাবে। নির্বাচন পরবর্তীতেও প্রতিটি কার্যক্রমে ঐক্যের সুর দেখা যায়। তবে বিগত একমাস থেকে আবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মনস্তাত্তিক বিরোধ দেখা যাচ্ছে। এমনকি একই জায়গায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদা সময়ে ক্যাম্পেইন (মতবিনিময়) করার তথ্য আছে। মূলত সিটি নির্বাচনের ‘মেয়র প্রার্থীতা’ নিয়েই এ মনস্তাত্তিক দ্ব›দ্ব বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কেন্দ্র এখনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই প্রার্থী করবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জনগণে কাকে চায় সেটাও জরিপ করবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্র সেটা করছে। সাধারণত প্রার্থী দেখে আওয়ামী লীগের লোকজনও বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেয়। জনগণের পালস বুঝেই প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্র।
নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো দলাদলি নেই। কেন্দ্র সভাপতিকে প্রার্থী করে, সভাপতি অপরাগ হলে অন্য কাউকে করে এটা চিরাচরিত নিয়ম। আমরা বিরোধী দল। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যাকেই প্রার্থী করা হবে আমরা তার জন্য কাজ করবো।
সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের প্রার্থীতার বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর বলেন, নির্বাচন করা সকল রাজনৈতিক নেতার স্বপ্ন থাকে। আমারও সেই স্বপ্ন আছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে নগর বিএনপির সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি অংশ নেন। আমি এখনো কোন নির্বাচনে অংশ নিইনি। যেহেতু তারা দু’জন সংসদ নির্বাচন করেছেন সেহেতু আমি আশাবাদী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমার অগ্রাধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, এই নগরের অলিগলির সব মানুষই আমাকে চেনেন। তারা চান আমি যেন মেয়র পদে নির্বাচন করি। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মানুষের স্বার্থে দেশের স্বার্থে বিএনপির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি জয়ের মুকুট দলকে উপহার দিতে পারবো।
মেয়র প্রার্থীতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হাসেম বক্কর বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমরা সংসদ নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি। সকল কার্যক্রমে ঐক্যবদ্ধভাবে আছি। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মেয়র প্রার্থীতা দাবি করতেই পারি। দলীয় হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিবেন। এতে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হবে না।
গত ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের মার্চের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা জানান। এরপর থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে কৌতূহল। তাছাড়া সব নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে এমনটাও গুঞ্জন শোনা যায়। যার কারণে আগামী চসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। এ পর্যন্ত সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের নামই আসছে ঘুরেফিরে। এরমধ্যে ডা. শাহাদাত হোসেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তারও আগে তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয়ভাবে এম মনজুর আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তবে আবুল হাসেম বক্কর এখনো পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটিও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচন আসুক, তখন দলীয় হাইকমান্ড একটি সিদ্ধান্ত নিবে। এ মুহূর্তে পার্টি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না বা কাকে প্রার্থী করবে কোন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সরকার বিরোধী আন্দোলনে দমন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলা। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার একমাত্র মোক্ষম হাতিয়ার নির্বাচন। তাই নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অংশ নিতে চায় বিএনপি। সে হিসাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিবে এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দলীয় চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা এম মনজুর আলম। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে।