দেয়াল ধসে দুইজনের মৃত্যু

34

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর জামালখানে পরিত্যক্ত ভবন ভাঙার সময় দেয়াল ধসে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জামালখানের সিকদার হোটেলের পাশে রতন ভট্টাচার্যের মালিকানাধীন ভবন ভাঙার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন- মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩০) ও রণ চক্রবর্তী (৬০)। পুরনো ওই ভবন ভাঙার কাজ পাওয়া ঠিকাদারের সুপারভাইজার জসিম ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান রণ চক্রবর্তী। জসিম ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে আর রণ সাতকানিয়ার কালিয়াইশ মৌলভীর দোকান এলাকার দুলাল চক্রবর্তীর ছেলে।
নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়াই ফুটপাত সংলগ্ন ভবনটি ভাঙার কাজ চলছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফুটপাতের পাশে ভবনের দেয়াল ভাঙার সময় একাংশ ভেঙে পড়লে জসিম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত রণকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে রণ মারা যান।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থলে যায়। এসময় একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আরেকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি ছাড়া ভবন ভাঙার কাজ করা হচ্ছিল। বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ দিন ধরে পরিত্যক্ত ভবনটি ভাঙার কাজ চলছিল। গতকাল বিকেল ৪টা নাগাদ ভবন ভাঙার কাজ চলাকালে হঠাৎ দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ভবন ভাঙার কাজে নিয়োজিত সুপারভাইজার জসিম উদ্দিন দেয়াল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এঘটনায় আহত রণ চক্রবর্তীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ভবন মালিক ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এমনটা হয়েছে জানান তারা।
জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন জানান, দোতলা ভবনটি প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো। প্রায় ১৫ বছর আগে সেটি কিনেন রতন ভট্টাচার্য নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি ভবনটিকে পণ্যের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। মাসখানেক আগে ভবনটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়। এরইমধ্যে ভবনের পেছনের অংশ প্রায় ভেঙে ফেলা হয়েছে। সামনের দিকে অর্থাৎ ফুটপাতের দিকে আসার পর ত্রিপল খুলে বাঁশের ঘেরা দেয়া হয়েছিল। ভাঙার সময় কার্নিশের একটি অংশ ভেঙে পড়লে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিকেলের দিকে জামালখান এলাকার তিন-চারটি স্কুল একসাথে ছুটি হয়। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকেরা জামালখানের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যান। সংশ্লিষ্টদের এভাবে ভবন ভাঙার কাজ করা উচিৎ হয়নি।’
নগরে ভবন ভাঙা-গড়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে কিংবা পুরনো ভবন ভাঙার সময় মৃত্যু এখন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিনিয়ত অলিগলিতে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। নির্মাণাধীন ভবনে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত না করার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ভবন থেকে বিভিন্ন মালামাল, যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম নিচে পড়ছে। এসব দুর্ঘটনায় কখনো কখনো প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। শুধু নানা নির্মাণ সরঞ্জাম পড়ছে তা নয়, শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছে না নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার শ্রমিকদের মধ্যেও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে উদাসীনতা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নজরদারির কথা থাকলেও সংস্থাটি কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। অজ্ঞতা আর অবহেলার কারণে নির্মাণাধীন ভবনে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। বাড়ি বা দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব আইন রয়েছে অনেকেই তা জানেন না, কিংবা জানলেও মানেন না। আর এই আইনকানুন মানা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিধি অনুসারে, নিরাপত্তার ব্যাপারে যে সকল বিষয় ভবনমালিক বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পালন করার কথা তা যথাযথভাবে পালন করা হয় না।