দেড় হাজার কোটি টাকার পায়রা সেতুতে গাড়ি চলবে আজ

7

বরিশালে থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ১শ ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯১ কিলোমিটারে অবস্থান পায়রা বন্দরের। পাঁচটি ফেরি পার হয়ে দীর্ঘ বছর ধরে বরিশালে থেকে কুয়াকাটায় যেতে হয়েছে ভ্রমণপিয়াসুদের। আর কমপক্ষে তিনটি ফেরি পার হতে হয়েছে বরগুনা ও পটুয়াখালীবাসীদের। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ওপর ২০১১ সালে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, ২০১৫ সালে পটুয়াখালীর শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু, ২০১৬ সালে আন্ধারমানিক নদের ওপর শেখ কামাল সেতু ও সোনাতলা নদীর ওপর শেখ জামাল সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বরগুনা ও পটুয়াখালীবাসী মুক্তি পায় ফেরির বিড়ম্বনা থেকে।
বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও বরগুনার আমতলীতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার সঙ্গে চাপ বেড়ে যায় পায়রা নদীর লেবুখালি ফেরিঘাটে। মাত্র এই একটি ফেরি পথের ভোগান্তি সৃষ্টি করে আসছিলো হাজারো মানুষের।
আজ (রোববার) সেই নদীর ওপর সেতুরও উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিভাগের মধ্যে থাকা ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে ফেরিবিহীন সরাসরি সড়কপথে কুয়াকাটা ও পায়রাবন্দরের যোগাযোগ স্থাপন হবে।
এতে করে ১শ ১২ কিলোমিটার সড়ক পথে আধা ঘণ্টার বেশি সময় বেঁচে যাবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে যাত্রাও নিরাপদ হবে বলে দাবি তাদের।
সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ি থেকে সরাসরি কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বাড়বে, সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। বরিশাল বিভাগে এ সর্ববৃহৎ এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুহলে পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপক‚লীয় ১০ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখা যাবে। খবর বাংলা ট্রিবিউন/ বাংলানিউজের।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শেষ ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের শুরুর অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমÐিত পায়রা নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান। বরিশালের প্রান্তে সেতুটির পশ্চিম দিকে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের অবস্থান। পদ্মাসেতুর টোল প্লাজা থেকে এ সেতুটি ১৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বরিশাল নগরের রুপাতলী থেকে ২৯ কিলোমিটার, পটুয়াখালী শহর থেকে ১১ কিলোমিটার এবং সাগরকন্যা কুয়াকাটার বাস টার্মিনাল থেকে ৭৯ কিলোমিটার দূরে এ সেতুর অবস্থান। সেতুর উত্তর দিকে ওজন স্কেল এবং দক্ষিণ দিকে ইলেকট্রনিক টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।
পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, সেতুটি উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সাজ সাজ রব বিরাজ করছে সেতুর উভয়পাড়ে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেজন্য সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে পটুয়াখালীর পাঁচ সংসদ সদস্য ছাড়া বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পায়রা সেতু প্রকল্প অফিস জানায়, পায়রা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। যার ৮২ ভাগ অর্থ বহন করছে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট এবং এপেক ফান্ড। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই শুরু হওয়া এ সেতুর ইতোমধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুর উভয়পাড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। নদী শাসনের কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বেলেন, এ সেতুতে হেলথ মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহারের ফলে ভূমিকম্প, বজ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ওভারলোডেড গাড়ির কারণে ক্ষতি এড়াতে পূর্বাভাস মিলবে। নদীর মধ্যে এবং পাশে থাকা পিয়ারে যাতে কোনও নৌযান ধাক্কা দিতে না পারে সে জন্য পিয়ারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া এটি দেশের দ্বিতীয় ব্রিজ, যা এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০ টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এছাড়া সেতুতে রয়েছে ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট। এতে করে দূর থেকে সেতুটিকে ঝুলন্ত মনে হবে। জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। চার লেনের সেতুটির উভয়পাশে মোট এক হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

­