দেশে ৯৯০ জনের জন্য হাসপাতালে একটি শয্যা

3

দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতি ৯৯০ জন মানুষের জন্য একটি শয্যা রয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। ময়মনসিংহ-৭ আসনের এমপি এ বি এম আনিছুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরু হয়।
দেশে প্রতি ৫০ জন লোকের বিপরীতে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা শূন্য দশমিক শূন্য ২১১ বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে বেড সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০২২ সালের হেলথ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি শয্যা সংখ্যা ৭১ হাজার ৬৬০টি এবং বেসরকারি শয্যা সংখ্যা ৯৯ হাজার ৯৭৫টিসহ মোট ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৫টি শয্যা রয়েছে। মোট শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী প্রতি ৯৯০ জন লোকের বিপরীতে একটি শয্যা রয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ মুজিবুল হকের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যরা যদি তার সঙ্গে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তিনি অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করতে পারবেন। তিনি সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় যেসব ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টার আছে, সেখানে সব সুযোগ সুবিধা আছে কিনা, লাইসেন্স আছে কিনা, এসব দেখার আহŸান জানান। মন্ত্রী বলেন, তিনি সব হাসপাতাল বন্ধের পক্ষে না। যেখানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকা উচিত এবং আছে, সেসব হাসপাতাল থাকবে।
এইচ এম বদিউজ্জামানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমনত্রী বলেন, তিনি সব বিভাগে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে কী কী সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে দ্রæত সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে রোগীর ভিড় হবে না, মাটিতে শুয়ে থাকতে হবে না।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সরকারি হাসপাতালে স্নাতক ডাক্তার ২৯ হাজার ৫৬১ জন। স্নাতক নার্সের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০ জন, তাদের মধ্যে বিএসসি ইন নার্সিং ৩ হাজার ৯০৪ জন, বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১ একহাজার ৫৯৭ জন এবং বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) ১ হাজার ১৪৯ জন। স্নাতক ফার্মাসিস্ট ৫ জন।
স্বতন্ত্র এমপি মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশীয় মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ৪২৯টি উপজেলা হাসপাতালের মধ্যে ৩৮৩টিতে এক্সরে মেশিন রয়েছে, যার মধ্যে ৫৩টি অচল হয়ে আছে বলে জানান মন্ত্রী।
সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য-অর্থনীতি ইউনিটের অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আনুষ্ঠানিক খাতের সরকারি চাকরিজীবী ও পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের জন্য সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে অনানুষ্ঠানিক খাতের জনগোষ্ঠীকেও এ বিমার আওতায় আনা হবে।
সরকার দলীয় এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের জাতীয় পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। তাই দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে অক্রোন্ত কিনা, এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। লিভার ক্যানসারের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। ফ্যাটি লিভারের কারণে লিভার ক্যানসার হতে পারে। তবে এর সঠিক কারণ সম্পর্কিত কোনও গবেষণা তথ্য নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আগামীতে আরও গবেষণা করা হবে। ক্যানসারের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গোলাম ফারুকের (ল²ীপুর) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৩৪টি জেলায় ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন চলমান প্রক্রিয়া। কোনও জেলার মোট জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান, প্রয়োজনীয়তা, জনগুরুত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে।
সরকার দলীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের (সুনামগঞ্জ-৫) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স¤প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু দেশ, ভারত, সিংঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ফিলিপাইন, চীনসহ বিশ্বের ৭১টি দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঝঅজঝ-ঈড়ঠ-২ ঠধৎরধহঃ ঔঘ.১ ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৩২ জন। গত ২০ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এই সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সার্ভেল্যান্স কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।