দেশে ৮ মাসে ৮৩০ ধর্ষণ ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি

5

দেশে ধর্ষণ যে হারে বেড়ে গেছে তাতে মনে হয়, নারী ও শিশুরা ঘর থেকে বের হওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ধর্ষণে সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ আইন পাস করার পরও দেশ হতে ধর্ষণ কমছে না। বরং নারী ধর্ষণের পাশাপাশি শিশু-নারী ধর্ষণও মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন হতে লক্ষ করা যাচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শেণি, পঞ্চম শ্রেণিসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী স্কুল, মাদরাসা, মক্তবে যাওয়ার পথে কিংবা দোকানপাট, রাস্তায় চলাচলের পথে শিশুদের নানা প্রলোভনে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে ঘটনা ফাঁস হবার ভয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ নামের পশু পুরুষের এহেন কর্মকাÐে সন্তানের অভিভাবকরা আতঙ্কিত। ঘর হতে বের হবার পর ছোট ছোট মেয়েদের ঘরে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
দেশের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থার এমন পতন অতীতে এতো মারাত্মক ও ভয়াবহ আর দেখা যায়নি। এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে দু’টি লোমহর্ষক ঘটনা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। ইতোপূর্বে নগরীর জামালখান ওয়ার্ডে ছোট এক নারী শিশুকে এক দোকানের কর্মচারী দোকানের গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করার পর শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে বস্তা ভরে নালায় ফেলে দেয়। পুলিশ তদন্ত করে ধর্ষণ ও হত্যাকারীকে ধরতে সক্ষম হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসে ক্লাবে ধর্ষণ ও শিশু হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধন হতে দেখা যায়। সিআইডি পুলিশের তদন্তে ধর্ষণকারী ধরা পড়ায় তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশের আইন প্রক্রিয়ার মারপ্যাঁচে এখনো ধর্ষণকারীকে শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ২৬ নভেম্বরের এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় পিশাচরূপী এক যুবক মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর বয়সি নিষ্পাপ শিশু আলিন ইসলাম আয়াতকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে চিপসের লোভ দেখিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়ে খুনের পর লাশ ৬ টুকরো করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়। উক্ত ঘটনায় পিবিআই ঘাতক আবির আলী (১৯) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। চাক্তাই এলাকার তথা বাকলিয়ার এ ঘটনার সাথে পত্রিকায় আরো খবর এসেছে রাঙ্গুনিয়ায় প্রাথমিক স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার। রাঙ্গুনিয়ার লালানগরের এ ঘটনায় ধর্ষিতা শিশুর মা থানায় মামলা করেছে। পুলিশ ২ আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
দেশে ধর্ষণ বাড়ার পাশাপাশি শিশু ধর্ষণও মারাত্মক রূপে দেখা যাচ্ছে। দেশের সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের কারণে যেমন ধর্ষণ বেড়েছে তেমনি ধর্মীয় সামাজিক নৈতিকতা চর্চার অভাবেও এমন ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এ দেশ ৯০/৯৫ শতাংশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ। অথচ যৌন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যে সকল ইসলামী বিধান কোরআন হাদিস নির্দেশ করে তার কোন বালাই নেই এদেশের মুসলিম সমাজে। নারীদের শালিন পোশাকের বিষয়ে আমাদের দেশের অভিভাবকরা এক প্রকার উদাসীন। নারীদের পর্দা মেনে চলার পক্ষে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। শিশু হোক বা যুবতী নারী হোক তাদের চলাফেরা, মেলামেশার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নির্দেশনা এদেশের অধিকাংশ লোক মানছে না। যুগে যুগে পুরুষের মধ্যে যৌন ক্ষেত্রে পশুবৃত্তির প্রবণতা ছিল এবং এখনো রয়েছে। অভিভাবকরা সচেতন হলে যৌন আক্রান্ত পশুরা এভাবে শিশু ও নারী ধর্ষণের সুযোগ পায় না। এক সময় মুসলিম সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি সমাজের মানুষ আগ্রহী ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমরা অতিমাত্রায় আধুনিক, প্রগতিপন্থী এবং জীবিকা ভিত্তিক শিক্ষাচিন্তায় অতিমাত্রায় মগ্ন হবার কারণে সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা না দিয়ে কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি স্কুল এবং বৈষয়িক সাফল্য অর্জনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে প্রচলিত শিক্ষায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও নৈতিক নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। ইসলাম যে সকল পুরুষ হতে নারীদের দূরে থাকতে নির্দেশ দেয় তা আমাদের সমাজ বর্তমানে পালন করে না। মানুষও এক প্রকার জীব। মানুষের জীবসত্তা শিক্ষাদীক্ষা পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ লাভ করলে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে সমাজে নারী শিক্ষার্থীদের যে হারে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় যেতে দেখা যাচ্ছে সে হারে পুরুষ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। ফলে দেশের অধিকাংশ পুরুষ সন্তান শিক্ষা হতে ছিটকে পড়ছে। শিক্ষায় নারী পুরুষের ভারসাম্য বর্তমানে নেই। নারীদের চেয়ে পুরুষরা অপরাধ প্রবণতায় বেশি লিপ্ত হচ্ছে, আবার পর্দাহীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কিছু নারীও সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ষকদের দ্রæত বিচারের আওতায় আনা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের দেশে দ্রুত বিচারও দুই তিন বছর দেরিতে শাস্তিকার্যকর করে থাকে। ঘটনার রেশ কেটে ওঠার আগেই অপরাধের শাস্তি কার্যকর করা গেলে তার প্রভাব সমাজে পড়বে। শিশু ও নারী ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থা করে দেশকে শিশু ও নারী ধর্ষণের ভয়াবহ অবস্থা হতে রক্ষা করা প্রয়োজন বলে মত দেশের বিবেকবান মানুষের।