দেশে মৃত্যু-শনাক্ত দুটোই বেড়েছে

11

নমুনা পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে; সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে প্রায় ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৮৪৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৩১ জনের।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ৯১৬ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসে।
নমুনা পরীক্ষা ৩১ হাজারে নেমে আসায় আগের দিন শনিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও ৯ হাজার ৩৬৯ জনে নেমে এসেছিল, আর মৃত্যু হয়েছিল ২১৮ জনের। রোববার দুই সংখ্যাই ফের বাড়ল।
গত একদিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮ হাজার ৩৫৫ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি।
আর এই সময়ে যে ২৩১ জন মারা গেছেন, তাদের ৭৭ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৩ জন এবং খুলনা বিভাগে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সরকারি হিসেবে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১৫ হাজার ৫৪ জন গত একদিনে সেরে উঠেছেন।তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৬ জন সুস্থ হলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা ভাইরাসের রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ১৪৬ জন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১২ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ২৮ জুলাই। সেদিনই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২৮ জুলাই তা ২০ হাজার ছাড়ায়। তার আগের দিন ২৭ জুলাই রেকর্ড ২৫৮ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গেল জুলাই মাসে মহামারির সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এই এক মাসেই দেশে মোট ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৬১৮২। একক মাস হিসেবে এত রোগী শনাক্ত বা মৃত্যু এর আগে দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এপ্রিল, মে আর জুন মাস মিলিয়ে দেশে যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, এক জুলাই মাসেই হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আর এই এক মাসেই মারা গেছে আগের ছয় মাসের প্রায় সমান রোগী।
বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪২ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে সারা দেশে মোট ৪৯ হাজার ৫২৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ৪২৩টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা আগের দিন ৩০ দশমিক ২৪ শতাংশ ছিল।
দেশে এই পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ঢাকা জেলায় গত একদিনে দেশের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২০২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৫৮৩ জন কোভিড রোগী।
এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ৪০৫ জন, কিশোরগঞ্জে ১২৩ জন, মাদারীপুরে ২২১ জন, মানকিগঞ্জে ২৪৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ২০৬ জন, নরসিংদীতে ২৬২ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৯৫ জন, শরীয়তপুরে ১৭৩ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৮৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯২৭ জন, কক্সবাজারে ১৮৫ জন, চাঁদপুরে ১১৮ জন এবং কুমিল্লায় ৩১৪ জনের কোভিড ধরা পড়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২৩৬ জন, পাবনায় ১৬৯ জন এবং বগুড়ায় ১৩৭ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে। খুলনা বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়ায় ১৮১ জন ও খুলনায় ১৮৯ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ৩১২ জন, নেত্রকোণায় ১৩২ জন, শেরপুরে ১০৫ জন, রংপুরে ১৫৬ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০৭ জন, বরিশালে ২৫৩ জন, পটুয়াখালীতে ১৩৭ জন, সিলেটে ৩৯৯ জন, সুনামগঞ্জে ১০৬ জন, হবিগঞ্জে ৩৫১ জন এবং মৌলভীবাজারে ১৪০ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
ঢাকা বিভাগে গত একদিনে যে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২৮ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫৩ জন জনের মধ্যে ১৫ জন কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, রংপুর বিভাগে ১৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন ও সিলেট বিভাগে ৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত একদিনে।
মারা যাওয়া ২৩১ জনের মধ্যে ১২৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৪৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের মধ্যে ১৩৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৯২ জন ছিলেন নারী। ১৬৮ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে ১৩ জন বাসায় এবং ১ জন হাসপাতালে আনার পথে মারা যান।