দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ২ হাজার ছুঁইছুঁই

15

দেশে নতুন করোনা ভাইরাসে প্রথম এক হাজার জনের মৃত্যু ঘটতে লেগেছিল প্রায় তিন মাস, এরপর মাত্র ২৪ দিনের মধ্যে তা ২ হাজার ছুঁইছুঁই অবস্থায় পৌঁছেছে। গত ৪ ঘণ্টায় আরও ২৯ জনের মৃত্যুতে দেশে মৃতের সংখ্যা গতকাল শনিবার ২ হাজার কাছে পৌঁছে গেছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা এখন ১ হাজার ৯৯৭ জন।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। প্রায় এক মাস পর মৃতের সংখ্যা ২০ এপ্রিল ১০০ ছাড়িয়েছিল। মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায় গত ২৫ মে। গত ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। দেড় হাজার ছাড়িয়েছিল ২২ জুন। প্রথম মৃত্যুর ৮৪ দিন পর ৪ জুলাই মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের কাছে পৌঁছে গেল। এই হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়াতে সময় লেগেছিল ২ মাস ৭ দিন। পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১৬ দিনের মধ্যে। তার পরের ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে ১২ দিনে। মৃতের তালিকায় আরও ৪৯৭ জন যোগ হতে সময় লাগল ১৩ দিন।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে ২৫ জন হাসপাতালে এবং ১ জন বাড়িতে মারা গিয়েছিলেন। তিনজনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃতদের মধ্যে ৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন খুলনা বিভাগের, ৭ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের এবং ২ জন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এছাড়া ১ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
মোট মৃত ১ হাজার ৯৯৭ জনের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মৃত্যুর হার ৪৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২৯ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২০ শতাংশ, ১০ বছরের নিচে রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ।
সারা দেশে মোট মৃত রোগীদের এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ১ হাজার ৪১ জন, চট্টগ্রামের ৫২১ জন, রাজশাহীর ১০১ জন, খুলনার ৮২ জন, বরিশালের ৬৭ জন, সিলেটের ৮৪ জন, ময়মনসিংহের ৪৮ জন, রংপুর বিভাগের ৫৩ জন। এদিন বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে শেষ ১০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৬ দিনে।
বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ২৮৮ রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে গতকাল শনিবারের বুলেটিনে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে ৭১টি পরীক্ষাগার চালু হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৭টি পরীক্ষাগার থেকে নমুনা সংগ্রহের তথ্য আসেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় মধ্যে ৬৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৭২৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে; এ পর্যন্ত দেশে পরীক্ষা হয়েছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৭৪টি নমুনা।
আইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৬৭৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৭০ হাজার ৭২১ জনে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের