দেশে আরও ১ জনের মৃত্যু নতুন আক্রান্ত নেই

58

দেশে করোনা ভাইরাসে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচ জনে। জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এই তথ্য জানান। গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) ফেসবুক লাইভে তিনি এই তথ্য জানান।
তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কারও দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ফলে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে এখন ৩৯ জন। ডা. ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কারও দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি।
তিনি জানান, সর্বশেষ যিনি করোনায় মারা গেছেন তিনি বিদেশ থেকে আসা এক রোগীর পরিবারের সদস্য। তিনি করোনা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন গত ১৮ মার্চ। এর পর থেকে তিনি তার এলাকার একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন। তাকে সেখান থেকে ঢাকায় আনা হয় গত ২১ মার্চ এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রাখা হয়। গতকাল সকালে তিনি মারা যান। তিনি একজন পুরুষ এবং বয়স ৬৫ বছর। তার ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন ছিল। খবর বিডিনিউজ/বাংলা ট্রিবিউনের
বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই : বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ পার হওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, যা এখন সাড়ে ১৯ হাজারেরও বেশি বলে জানাচ্ছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
আসছে দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র প্রাদুর্ভাবের নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) আর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারত দেশজুড়ে পুরোপুরি ২৪ ঘণ্টার লকডাউন শুরু করেছে।
একদিকে এই মহামারির প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশ বুধবার থেকে লকডাউন তথা অবরুদ্ধ দশা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে অপরদিকে বহু দেশ নতুন করে লকডাউন শুরু করেছে বা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেশী মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো দুই জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে আর সৌদি আরব, কেপ ভার্দিতে ঘটেছে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।
বিশ্বজুড়ে প্রবল আতঙ্ক তৈরি করা ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উৎপাদন স্থবির করার হুমকি তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেম সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসএসই) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুলে ধরা হল।
রয়টাস বলছে, ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ২১ হাজার লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ লোকের। অপরদিকে জনস হপকিন্স জানাচ্ছে, বিশ্বের ১৭১টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৩৫ হাজার ৬ জনে দাঁড়িয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৬২৫।
রয়টাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আক্রান্তদের মধ্যে এক লাখ আট হাজার ৭৪৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, হপকিন্সের হিসাব অনুযায়ী সংখ্যাটি এক লাখ নয় হাজার ১৯১ জন।
চীন থেকে ছড়ালেও এখন নভেল করোনাভাইরাস মহামারি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। মহাদেশটির ইতালি মৃত্যু সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করে ভাইরাসটি কতোটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তা দেখাচ্ছে।
ইতালির আক্রান্তের সংখ্যা সম্ভবত সরকারি হিসাবের ১০ গুণ বেশি বলে দেশটির তথ্য সংগ্রাহক সংস্থার প্রধান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জানিয়েছে রয়টার্স।
গতকাল বুধবার দুপুর নাগাদ জনস হপকিন্সের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজার ১৭৬ জন, মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ৮২০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩২৬ জন।
মৃতের সংখ্যায় স্পেন ইতোমধ্যে চীনকে ছাড়িয়েছে ইতালির পরেই স্থান নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে একলাফে রেকর্ড সংখ্যক ৭৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিন দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬১০ জনে, মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ স্বাস্থ্য কর্মী হওয়ায় দেশটির চিকিৎসক ও নার্সরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ফ্রান্স কভিড-১৯ এ মৃত্যুর দিক দিয়ে পঞ্চম দেশ হিসেবে মঙ্গলবার এক হাজারের কোটা পার করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটির আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৬৩৫ জন, মৃতের সংখ্যা ১১০২ জন ও সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৮৮ জন।
জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৯৫২ জন, মৃতের সংখ্যা ১৭১ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ২৯৯ জন।
যুক্তরাজ্যের নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ১৬৭ জন, মৃতের সংখ্যা ৪২৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪০ জন। দেশটির ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপ্রধান ৭১ বছর বয়সী যুবরাজ চার্লসও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১০ হাজার ১৭১, মৃত্যু ১৩৫ ও সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৫৮৫, মৃত্যু ২৭৭ ও সুস্থ হয়েছেন ৩ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত চার হাজার ৯৯৩ জন, মৃত্যু ১৭৮ ও সুস্থ হয়েছেন ৫৪৭ জন।
চীনে বুধবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে, বিদেশ প্রত্যাগতদের মধ্যে আক্রান্ত কমেছে এবং স্থানীয়ভাবে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
পরিস্থিতি উন্নতির ধারাবাহিকতায় নভেল করোনাভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশ বুধবার সব ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই প্রদেশটির প্রায় ছয় কোটি লোক জানুয়ারি থেকে লকডাউন অবস্থায় ছিল। সংক্রমণের যেখান থেকে ছড়িয়েছে হুবেইয়ের সেই রাজধানী শহর উহান থেকে ৮ এপ্রিল লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে।
এ পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৬৬১ জন, মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২৮৫ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৭৩ হাজার ৭৭০ জন। এশিয়ার অন্যতম প্রাদুর্ভাব আক্রান্ত দেশ ইরানে আক্রান্তে সংখ্যা ২৭ হাজার ১৭, মৃত্যু হয়েছে ২০৭৭ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৯৬২৫ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত নয় হাজার ১৩৭ জন, মৃত্যু ১২৬ এবং সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৭৩০ জন। জাপানে আক্রান্ত এক হাজার ১৯৩, মৃত্যু ৪৩ এবং সুস্থ হয়েছেন ২৮৫ জন। ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯০, মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৩১ জন। পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০১৬ ও মৃতের সংখ্যা সাত জন। সৌদি আরবে আক্রান্ত ৭৬৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২৮ জন। মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো দেশটিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।