দেশে আক্রান্ত বেড়ে ২০

58

বাংলাদেশে আরো তিনজনের মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা শুক্রবার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এই তিনজনকে নিয়ে বাংলাদেশে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কারও মৃত্যুর তথ্য আসেনি; এ পর্যন্ত বাংলাদেশে একজনেরই মৃত্যু হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন নারী, তার বয়স ৩৮ বছর। দুজন পুরুষের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ এর ঘরে, অন্যজনের ৭০ এর বেশি। সত্তরোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি ‘ক্রিটিক্যাল কনডিশনে’ আছেন। তার ‘কোমরবিডিটি’ (অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা) আছে এবং তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান নাসিমা সুলতানা।
তিনি বলেন, ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষ রোগী ইতালি ও জার্মানি ঘুরে এসেছেন। আর বাকি দুজন সংক্রমিত হয়েছেন অন্যদের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ওই নারী ইতালিফেরত একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। খবর বিডিনিউজের
ব্রিফিংয়ে বলা হয়,গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য আইসোলেশনে রাখা ব্যক্তি ৩০ জনকে। এছাড়া পরীক্ষার জন্য গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ জনের। এই সময়ে ৪৪ জন বিদেশফেরত ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এক ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত করার গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, তাকেও আক্রান্তের তালিকায় রাখা হয়েছে কি না।
উত্তরে আইডিসিআরের মেডিকেল এন্টোমোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, “ওই ব্যক্তি এখানে অন্তর্ভুক্ত নন। ওটা রি-টেস্টিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।”
বাংলাদেশে নভেল করোনা ভাইরাসের ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের’ (সামাজিকভাবে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়া) কোনো ঘটনা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন বিদেশ ফেরতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আক্রান্ত পাচ্ছি আমরা। পরিবারের বাইরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।”
করোনা ভাইরাসের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে যোগাযোগের জন্য হটলাইন চালু করেছে আইইডিসিআর। তাতে ফোন করলে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন আইইডিসিআরের কর্মীরা।
হটলাইন নম্বর: ০১৯৪৪৩৩৩২২২। কেউ চাইলে iedcrcovid19@gmail.com ঠিকানায় ই-মেইল করে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবেন। এছাড়া ফেইসবুক গ্রূপ Iedcr,COVID-19 Control Room এর ইনবক্সে সমস্যার কথা বলতে পারবেন।
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায় আইইডিসিআর। ওই তিনজনের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এসেছিলেন। ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য ছিলেন আক্রান্ত তৃতীয়জন। ওই সময় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি আরও চারজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।
এরপর গত ১৪ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও দুজন আক্রান্তের খবর জানান। ওই দুজন ইউরোপের দেশ ইতালি ও জার্মানি থেকে এসেছিলেন। তাদেরই একজনের মাধ্যমে পরিবারের এক নারী ও দুই শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর আইডিসিআর জানায় সোমবার।
আর মঙ্গলবার আরও দুইজনের মধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়ে বলা হয়, তাদের একজন হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন, অন্যজন বিদেশফেরত একজনের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এরপর বুধবার নতুন করে একজন নারী ও তিনজন পুরুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তাদের মধ্যে একজন আগে আক্রান্ত একজনের পরিবারের সদস্য। বাকি তিনজন বিদেশফেরত, দুজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার ইতালিফেরত এক ব্যক্তির পরিবারের তিন সদস্যের সংক্রমণ ধরা পড়ায় বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। তাদের মধ্যে একজন নারী, দুইজন পুরুষ। ইতালিফেরত পরিবারের যে সদস্যের সংস্পের্শে আসায় তারা সংক্রমিত হয়েছেন, তার মধ্যে আগেই এ ভাইরাস ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম দফার তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দশ হাজার।
করোনায় মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়াল : মহামারীর আকারে ছড়াতে থাকা নভেল করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখে পৌঁছে গেছে।
গত বছরের শেষ দিক থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্থানীয় বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে নিয়মিতভাবে একটি টালি প্রকাশ করে আসছেন জনস হপকিন্সের গবেষকরা।
করোনাভাইরাস মহামারী যেভাবে সবকিছু অচল করে ফেলেছে তাতে বিশ্ব একটি অর্থনৈতিক মন্দার দুয়ারে পৌঁছে গেছে বলে সতর্ক করে ধনী দেশগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে উদ্ভাবনী কর্মপন্থা ঠিক করে কাজে নামার তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেছেন, “আমরা আজ এমন এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যখন সাধারণ কৌশল কোনো কাজে আসবে না।”
উন্নত দেশগুলো এখন আফ্রিকা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে না পারলে তা লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর মত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলও করোনাভাইরাস মহামারীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গত ডিসেম্বরের শেষে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। ওই শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার নিতে শুরু করায় এর বিস্তার ঠেকাতে জানুয়ারির শেষে উহান এবং এক পর্যায়ে প্রায় পুরো হুবেই প্রদেশ কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। চীন থেকে বিভিন্ন দেশে ভাইরাস ছড়াতে থাকায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নানা কঠোর পদক্ষেপে চীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ পর্যন্ত সফলতা পেলেও নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৬০টির বেশে দেশে।