দেশের যোগাযোগের চিত্র বদলের সড়ক খুলছে

141

ছোট-বড় যানের জন্য আলাদা আলাদা লেন, লেন ধরে একদিকেই সব গাড়ির চলাচল, ক্রসিং এড়াতে উঠেছে ফ্লাইওভার, রয়েছে আন্ডারপাস- আধুনিক ট্রফিক সুবিধার সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা-ভাঙ্গা) উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন।
এর মধ্য দিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু হলে তার সর্বোচ্চ সুবিধা যাতে দেশের মানুষ পান, সেজন্য আধুনিক মহাসড়কের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তৈরি করা হয়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ে।
এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার মূল সেতু নির্মাণে গত মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় এক ঘণ্টাও লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মার সেতুর সুবিধা নিতে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন. ‘এই সড়ক ইউরোপের অনেক সড়ককে হার মানাবে। এই সড়ক বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেইন নয়, দুদিকে সার্ভিস লেনসহ এই এক্সপ্রেসওয়ে ছয় লেনের। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। আমার মনে হয়, ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককেও হার মানাবে। এতো চমৎকারভাবে এটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এর দায়িত্বে ছিল। মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরের অন্তর্ভুক্ত’।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ও ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে দু’টি পরিষেবা লেন রাখা হয়েছে, যাতে দ্রæতগামী যানবাহনগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় কমে আসে।
উদ্বোধনের একদিন আগে ঢাকার পোস্তগোলা থেকে মাওয়াঘাট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ি-মাওয়া অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে নিরবিচ্ছিন্ন দ্রুতগতির রাস্তায় শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া দিচ্ছিলেন শ্রমিকরা। সড়কের দুই পাশে সবুজায়নের জন্য বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে নানা পতাকা। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতুর ওই পাড়ে পানছার থেকে ভাঙ্গা-পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ।এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বাসিন্দাদের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত সুগম হবে। খবর বিডিনিউজের
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়েতে উপকৃত হবেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। প্রকল্পটি আগামি ২০ জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন মাস আগেই তা শেষ হয়েছে বলে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী জানান।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার করা হয়েছে আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার ও মালিগ্রামে। খবর বিডিনিউজের
এক্সপ্রেসওয়ের জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে। এরইমধ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা পাচ্ছেন জানিয়ে গুলিস্তান থেকে মাওয়া রুটের ইলিশ পরিবহনের চালক শাহিন বলেন, ‘এই রাস্তা করাতে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। এখন কম সময়ে ঢাকা থেকে মাওয়া যাওয়া যাবে। আগে দেড় ঘণ্টা সময় লাগত, এখন ঢাকা যেতে আধা ঘণ্টা লাগে। এছাড়া এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা একেবারে নাই বললেই চলে’।
মাওয়া ঘাটের নিরালা রেস্তোরাঁর মালিক মো. মাসুদ বলেন, ‘সড়ক উন্নত হওয়ায় রোগীদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় নিয়ে যেতে পারি। দ্রুত যোগাযোগের কারণে এখন অনেক লোকই আমাদের এলাকায় ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করতে চায়। আমার মনে হয়, এই অঞ্চলটি একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হবে’।
এক্সপ্রেসওয়ের পোস্তগোলার যে অংশে রেলপথ এড়িয়ে যান চলাচলের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তার পাশের চা বিক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এখানে যানজট লেগেই থাকত। এখন তো সব গাড়ি উপর দিয়েই যাবে। দূরের গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে এখানে দীর্ঘ সময় আটকে থাকত, এখন আর এই এলাকায় যানজট থাকবে না’।