দেশের মানুষ রাজতন্ত্র চায় না : ড. কামাল

34

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিররুদ্ধ ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেছেন, এ দেশের কোনো মানুষ রাজতন্ত্র চায় না। ‘ভুল কথা বলে অসত্যের ওপর ভর’ করে দেশ পরিচালনা করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় কামাল হোসেন বলেন, ‘যখন আমি দেখি, মানুষ কিছুটা অসহায় বোধ করছে। কেন বোধ করছে? সরকার তাদেরকে মালিক হিসেবে যেটা শ্রদ্ধা করার কথা, তাদের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার কথা-এটা করছে না। জনগণ যেটা বলছে তার উল্টোটা তারা করছে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিলে জনগণের দাবি। ২৯ তারিখ (ডিসেম্বর) রাতে কী হলো? সেটা কি অবাধ ছিল, নিরপেক্ষ ছিল, নির্বাচন ছিল, কী ছিলো সেটা? আমি তো খুঁজেই পাচ্ছি না যে কী হল সেদিন? পরের দিন বলা হলো যে, এবার ধন্যবাদ ধন্যবাদ আমরা তো পাঁচ বছর হয়ে গেল, আরও পাঁচ বছর থাকব।’-খবর বিডিনিউজের
সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, এখানে কেউ রাজতন্ত্র চায় না। জনগণের মধ্যে যাচাই করে দেখেন, এখানে কাউকে রাজা-রানী ঘোষণা করতে চায়? যিনি নিজে রাজা-রানী হতে চান এটা তারা করতে পারেন কিন্তু তারা প্রকাশ্যে বলবেন না। কেন বলবেন না? কারণ জনগণের কাছে এটা একদমই গ্রহণযোগ্য না। বাংলাদেশের একটা বৈশিষ্ট্য আছে- এখানে কোনোভাবে এদেশের জনগণ রাজা-রানীকে মানার জাতি না।
সামরিক শাসক এরশাদের পতনের কথা তুলে ধরে গণফোরাম সভাপতি বলেন, একাত্তরের পরেও যেমন স্বৈরাচারকে হটানো হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, এদেশটা আমাদের সকলের, এটা আমাদের দখলে নেব, গণতন্ত্র প্রক্রিয়ার মধ্যে নেব, সংবিধানের মধ্যে স্থাপন করব। ইনশাল্লাহ যে ঐক্যের ভিত্তিতে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল, সেই ঐক্যের ভিত্তিতে আমরা দেশ শাসন করব। জনগণের মালিকানা অবশ্যই আসবে।
সরকার নিজের মধ্যেই সংকটে আছে বলে মনে করেন কামাল হোসেন। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দাবি করে তাদের সরকার চালাতে হচ্ছে এবং নানা রকমের প্রতিশ্রæতি দিতে হচ্ছে, যেটা পালন করা খুবই কঠিন হবে।
‘২ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পথে এই সরকার যাবে না। সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না, স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদ যায় না, তারা লজ্জা পায় না। তাকে বিদায় করতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে যেভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের বিদায় করেছে, আজকেও এই স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদ সিভিল ডিক্টেটরকে সেইভাবেই বিদায় করতে হবে। এবার সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে থাপ্পড় মেরে হবে না, চড় মেরে হবে না। তাদেরকে ওখান থেকে সরাতে হবে। এরা চোর, এরা বাটপার, এরা ডাকাত, এরা খুনি। এদেরকে আপসে হবে না, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হবে কি না আমি জানি না। সকলে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে-এটাই হোক ১ মার্চের শপথ।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণের ভোটের অধিকার লুট করে নিয়ে গেছে ২৯ তারিখ রাতেই। মানুষ কী করেছে? তারা ঘৃণায় ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ওদের দিকে এখন তাকাতেও চায় না। আওয়ামী লীগ নামের যে সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের এতো বড় ইতিহাস রচনা করেছিল, যে সংগঠনের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশে বিরাজ করে না। এখন যে আওয়ামী লীগ আছে ওটা পুলিশ লীগের অঙ্গসংগঠন। যদি পুলিশ লীগ না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে না। যদি পুলিশের অত্যাচার না থাকে তাহলে মানুষকে বাধ্য করতে পারবে না। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গতকালকে তথাকথিত ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচনে। ভোট কেন্দ্রে ফাঁকা ছিল। সমস্ত পত্রিকা লিখেছে- ভোটকেন্দ্র ফাঁকা, ভোটকেন্দ্র শূন্য। মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে তোমরা ভোটের ডাকাত, তোমাদের অধীনে ভোট করতে চাই না। তাই ভোট দেয়নি।
জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ গোফরানের সভাপতিত্বে ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির আবদুস সালাম, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, সিরাজ মিয়া, মোশাররফ হোসেন, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় রবের স্ত্রী তানিয়া রবসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।