দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার পরিবেশ বিপর্যয়? রোধে কার্যকর উদ্যোগ চাই

47

বলা যায়, এপ্রিল থেকে আগস্ট জুড়েই ছিল করোনার পিক আওয়ার। এসময় মানুষের কর্মতৎপরতা ও চলাফেরা সীমিত হওয়ার কারণে সবুজ প্রকৃতি তাদের ইচ্ছেমত ঢালপালা মেলে অনন্য সৌন্দর্যের রূপ ছড়ালেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এসময়েই পরিবেশ হারাতে বসেছে-এমনটি খবর আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলে। খবরে প্রকাশ গত ১০ থেকে ১২ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ভেসে আসতে দেখা যায়। যা নিয়ে নানা সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ হতে থাকে। আকস্মিকভাবে ভেসে আসা এ বর্জ্যের উৎস অনুসন্ধানে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। গত সপ্তাহে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বর্জ্যরে অধিকাংশ দেশীয়। ভেসে আসা বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিকস বর্জ্য। সঙ্গে এসেছে ট্রলারের মাছ ধরার ছেঁড়া জাল। আবার বর্জ্যরে সঙ্গে ভেসে আসছে বেশ কিছু মা কচ্ছপ। যা কলাতলীর সায়মন বিচ থেকে দরিয়ানগর পর্যন্ত এলাকার তীরে ভেসে আসে। দুদিনে সৈকতের ১০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫০-৬০ টন বর্জ্য ভেসে এসেছে। করোনা নিষেধাজ্ঞার কারণে সৈকতে যেখানে মানুষের পদচিহ্ন নেই, সেখানে এত বর্জ্য এলো কোথা থেকে? তার অনুসন্ধান শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ দুইমাস তদন্তের পর কমিটি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা জানতে পারি, তারা বেশ কিছু সুপারিশও করেছে। সুপারিশগুলো গঠনমূলক ও যুক্তিসংগত হলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ জরুরি। করোনা সংকটে দীর্ঘ সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার সৈকতসহ এখানকার হোটেল ও সব পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু জনশূন্য এই সমুদ্র সৈকত সয়লাব হয়ে যায় বিপুল পরিমাণ বর্জ্যে। বর্জ্য ঘটনা যখন ঘটেছে তখন ভরা বর্ষা মৌসুম ছিল, যে সময় সাগর স্বভাবতই উত্তাল থকে। সঙ্গতকারণে বর্ষা মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার ট্রলারও খুব একটা থাকে না। বর্ষার এ সময় কচ্ছপ (কাছিম), সাপসহ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। উদ্ভূত পরিস্থিতি শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্যই হুমকি নয়, আমাদের পর্যটন শিল্পের জন্যও অশুভ বার্তা।
বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্যভাÐার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের খনিও। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজসম্পদ সঞ্চিত রয়েছে সাগরের তলদেশে। প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচির মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমাদেরও সে সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে, বর্তমান সরকার সমুদ্র সীমায় আমাদের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার পর সমুদ্রসম্পদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং উদ্দীপনামূলক বক্তব্য প্রদান ও কর্মসূচি নিয়েছেন। এটি সঠিক ব্যবহার করতে হলে এখনই নজর দিতে হবে কক্সবজারের সৈকতের পরিবেশ সুরক্ষায। এ জন্য প্রয়েজন সমুদ্রে বর্জ্য ফেলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সমুদ্রে বর্জ্য জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রতিনিয়ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ দেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকতেও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। কক্সবাজারের কলাতলীতে অবস্থিত হোটেলগুলো মলমূত্রসহ অন্যান্য আবর্জনা সরাসরি সৈকতের পানিতে ফেলছে-এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার ওপর নির্জন সৈকতে কেউ না থাকার সুযোগে বর্জ্যগুলো কেউ সাগরে ফেলে দিয়েছে। সমুদ্রে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। প্লাস্টিক পণ্য ও পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো বেশি সরকারি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পলিথিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল বর্জ্য নদ-নদীতে কীভাবে নিক্ষিপ্ত হয় এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, সুনির্দিষ্ট করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।