দেশের প্রকৃতিতে মহা বিপর্যয়ের আশঙ্কা জনসচেতনতা জরুরি

12

বাংলাদেশের ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস বর্ষাকাল। বর্ষাসহ অন্যঋতুতে দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, তার উপর নির্ভরশীল দেশের প্রকৃতি। নীল নবঘনে, আষাঢ় গগনে, তিল ঠাঁই আর নাহিরে / ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে…, এমন কবিতা দেশের কবিরা বর্তমানে লিখতে ভুলে গেছে। যেখানে আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষার রূপ প্রকৃতি নেই, সেখানে কবিরা কি করে বর্ষার কবিতায় মাতোয়ারা হবেন। বর্ষা কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অপরিহার্য ঋতু। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয় এদেশে। যার ফলে দেশের প্রকৃতিতে পানির চাহিদা স্বাভাবিকভাবে মিটে। বর্ষাকালে বৃষ্টি না হলে আমন ধান লাগানো বিষয়ে কৃষকরা মহাবিপদের সম্মুখিন হতে দেখা যায়। এবছর বর্ষার পানিতে আমন ধানের চারা লাগানোর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কৃষকদের সেচের পানির আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করছে দেশের বহুস্থানে। যার ফলে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কৃষকের ব্যয় বাড়লে তার প্রভাব পড়বে দেশের শস্যের বাজারে। বাড়বে চালের দাম। বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ হলে প্রাকৃতিকভাবে এবং এ অবস্থা লাগাতার কয়েক বছর চলতে থাকলে দেশ মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে। বর্ষা এদেশের মাটিকে উর্বর করে। বর্ষা কম হলে মাটির উর্বরতা কমে যাবে। ফলে দেশের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বছর বর্ষার প্রথমে কয়েকদিন অবিরাম বৃষ্টি হলেও সমগ্র আষাঢ় মাসে তেমন বর্ষা প্রকৃতির দেখা মেলেনি। যার ফলে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে উষ্ণতা। আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধরা পড়েছে, যা সচরাচর বর্ষা ঋতুতে হতে দেখা যায় না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ছয় ঋতুর এদেশ ধীরে ধীরে চার ঋতুচক্রের দেশ হতে চলেছে। এর পেছনে বৈশি^ক উষ্ণায়নের পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রকৃতি ধ্বংসের কর্মকাÐ অনেকখানি দায়ী। দেশের বনাঞ্চল উজাড় করে দিচ্ছে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল। দেশের বন ধ্বংস ও নদী, নালা, খাল, চর ভরাট করে দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে ব্যাপক হারে। এর প্রভাবও দেশের প্রকৃতির উপর পড়ছে। যে পরিমাণে দেশে বন ও গাছ কাটা হচ্ছে সে পরিমাণ বন বৃদ্ধি ও গাছ লাগানো হচ্ছে না। দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্বাভাবিক রাখতে দেশের সরকার, বনবিভাগ এবং দেশের সাধারণ নাগরিকদের প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। নয় তো বৈশি^ক উষ্ণতায়নের প্রভাবে এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিপর্যের মুখোমুখি হবে। ফলে সুজলা, সুফলা বাংলার চিরায়ত রূপ বদলে যাবে।
বর্তমানে শ্রাবণ মাস চলছে। কিন্তু আষাঢ়ের অধিকাংশ দিন এবং শ্রাবণেও আশানুরূপ বৃষ্টি হচ্ছে না দেশে। যার ফলে উষ্ণতার কবলে পড়ে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। দেশে বহু চা-বাগান রয়েছে। বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায়র ফলে চা-বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। যার ফলে দেশে চা-শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্ষার পর শরৎ কালেও যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে দেশে সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। এ অবস্থা মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সুপরামর্শ প্রয়োজন। বর্ষায় অনাবৃষ্টির কারণে দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হলে দেশের উৎপাদন ঘাটতি মেটাতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশে^ তেল, গ্যাস ও খাদ্য সংকট বেড়ে যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশেও। এমতাবস্থায় দেশের জলবায়ু ও প্রকৃতির বিরূপ আচরণ দেশের মানুষ ও সরকারের কাম্য নয়। আমরা চাই বর্ষার পরেও বর্ষা ঋতু শেষ হওয়ার পরও বর্ষা হোক এদেশে। শরতে দেশের কবিরা গেয়ে উঠুক মৈথিলি কবি বিদ্যাপতির মতো ‘এ ভরাব বাদর মহাভাদর শূন্য মন্দির মোর’ এর মতো শরতে বর্ষার ঘাতি মেটানোর বৃষ্টি হোক দেশে। আসুন দেশের প্রকৃতি জলবায়ু, আবহাওয়া স্বাভাবিক রাখতে সবাই একত্রে দেশের প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসি। সচেতন করে তুলি দেশের সাধারণ মানুষকে।