দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলেই হবে : প্রধানমন্ত্রী

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকে দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেই আরেকটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করবে। তিনি বলেন, আরেকটি পাওয়ার প্লান্ট আমরা করবো। আমার ইচ্ছা পদ্মার ওপারেই অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলে করার। আমরা জায়গা খুঁজছি এবং আশা করি, এ ব্যাপারে খুব একটা অসুবিধা হবে না। এখানে যদি আরেকটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আমরা করতে পারি তাহলে বিদ্যুতের জন্য আমাদের আর অসুবিধা হবে না, বলেন তিনি। এ সময় ‘আর যেন কোন শকুনির থাবা না পড়ে বাংলাদেশের ওপর’ এবং ‘বাংলাদেশের এই উন্নতি এবং অগ্রগতি যেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায়’ সেজন্যও সকলকে সতর্ক করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী পাবনার ঈশ^রদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরএনপিপি-পারমাণবিক চুল্লিপাত্র) স্থাপনের কাজের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। তিনি গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ও আমরা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আর এই পাওয়ার প্লান্টটা হয়ে যাওয়ার পর আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি। যদিও দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত মাটিওয়ালা জায়গা পাওয়া খুবই কঠিন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন জায়গা আমরা সার্ভে করছি, আরেকটি পাওয়ার প্লান্ট আমরা করবো। কোথায় ভালো জায়গা পাই এবং আমরা সেটা করতে পারবো।
তিনি বলেন, আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি এই জন্য যে, এই বিদ্যুৎ সুবিধা যাতে মানুষ পায় এবং এটা যাতে অব্যাহত থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বসানোর এ ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। ওই কেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার মূল কাঠামো হচ্ছে এই বিশেষ যন্ত্র, পরিমাণবিক চুল্লি)। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হৃদপিÐ বলা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শওকত আকবর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের সময় আরএনপিপি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন।
সূত্র মতে, ইউনিট-১ এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হবে। এর ফলে এই ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২শ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও ১২শ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুত যখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, ইতোমধ্যে আমরা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছি। ২০২৩ সালে আমাদের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি আরো ত্বরান্বিত হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই সময়ে আমরা এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম আমরা বিশেষ করে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল আমরা স্থাপন করলাম। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। পাশাপাশি, ২০৪১ সালের মধ্যে এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশকেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই।
তিনি বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু, এখানেই থেমে গেলে চলবে না ’৪১ এ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলদেশ আমরা গড়বো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের অনেক পূর্বেই জাতির পিতা এখানে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের নিকট তাঁর দাবির প্রেক্ষিতেই ১৯৬১ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু কাজ তখন সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু, ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকার হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নিয়ে বিরাজমান বৈষম্যমূলক আচরণের পুনঃপ্রকাশ ঘটায়। আর স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই বঙ্গবন্ধু ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’ ‘আইএইএ’র সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন। সে সময় দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রয়াত স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ারও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশ আরো আগেই নির্মাণ করতে পারতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর সরকার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্লান-২০১০’ প্রণয়ন করে এবং আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় তাঁদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশ স্বাধীন হবার পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়ার বলিষ্ঠ সহযোগিতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে তাঁদের সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।