দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব

44

দেশের অভ্যন্তরে সমস্যার অন্ত নেই। রাজনৈতিক দলের ভিতর দুর্বৃত্তায়ন ,পুরো রাজনৈতিক বলয় শৃঙ্খলা বিবর্জিত, গুটিকতেক লুটেরাদের কারণে জনমনে এক ধরনের অস্বস্তি , ধর্ষণ, খুনের মাত্রা অস্বাভাবিক হরে বৃদ্ধি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অসহিষ্ণুতা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি চরম আকার ধারণ, তার উপর রোহিঙ্গাদের উটকো ঝামেলা।
এতদসত্তে¡ও হাঁটি হাঁটি পা পা করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পিছনের সমস্ত জঞ্জাল ও প্রতিকূলতা পদদলিত করে বীরদর্পে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর ভাবনাতে এবং কর্মে এ পথ চলা। পথ আগে থেকে পিচ্ছিল ও ভঙ্গুর। তাই সরকারের এই অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন অতীব প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্ববহ। যেমনিভাবে এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভোমত্বে জনগণ ছিল সরব। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও রাজনীতি, সমাজনীতি ও সংস্কৃতি ছিল এক সূত্রে গাঁথা।
রাজনীতি হচ্ছে মেধার বিকাশ ও প্রতিফলন। রাজনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে এক পাঠশালা। কোন একসময়ে বহিশত্রæকে পরাস্ত করার মানসে জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। অবশিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠি প্রয়োজনে তাদের সমর্থন জুগিয়েছে। দেশ আজ স্বাধীন। দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্বভাবতই ধরে নেয়া যায়, রাজনৈতিক ধারারও পরিবর্তন ঘটেছে। এই দেশ আমাদের। এই দেশের অগ্রগতি নিয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত। দল এবং আদর্শগতভাবে ভিন্নতা থাকলেও দেশের সামগ্রিক কল্যাণে আমরা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাব। প্রয়োজনে আলোচনা সমালোচনা এবং প্রতিবাদ করব । অন্যায়কে রুখে দেব । দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রা।ার সরকারের সদিচ্ছা ও ত্যাগী মনোভাব জনগণ প্রত্যাশা করে । আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা বাকস্বাধীনতা ও সমাজসচেতনতা অগ্রগতির পরিচায়ক । একথা বলতে দ্বিধা নেই বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগে আমরা দু বেলা দুমুঠো খাবারের চিন্তা করেছি । এখন আমাদের দৃষ্টি সামাজিক এবং সার্বিক উন্নয়নের দিকে ।
সত্যি কথা বলতে কি ,এই দেশের জনগণ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্নে বিভোর। জনগণের মধ্যে সেই জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দিনবদলের তথা সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কোন অশুভ শক্তিকে ছাড় দেবেননা বলে সরকার প্রধান ঘোষনা দিয়েছেন। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। এই শুভযাত্রা পথে অবশ্যই সকল বাধা এবং আগাছা উপরে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে দল এবং দলের বাইরে সুবিধাভোগীদের ব্যাপারে আরো কঠিন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন । দুর্বৃত্তদল ও সুবিধাভোগীদের পৃষ্ঠপো।কতায় রাঘব বোয়ালদের সম্পৃক্ততার কথা মানুষের মুখে মুখে । তাদেরকে আইনের আওতায় না আনলে প্রশ্নের অবতারনা হবে। আমরা প্রত্যাশা করি শুদ্ধি অভিযান হবে সুশাসনের পথে সহায়ক ও দৃশ্যমান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় টর্চার সেল হয় কিভাবে। তাতো একদিনে গড়ে উঠেনি। সেইদিক থেকে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাÐ সহজে মেনে নেয়া যায়না । দেশের জনসাধারণ এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ এবং সুবিচারের প্রত্যাশী। রাতে বুয়েটে পুলিশের উপস্থিতি এবং নাটকীয়তা বহুমুখী প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে । গুটিকতেক ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পুলিশের টিম ভিতরে ঢুকেনি। তাহলে বিপদের সময়ে পুলিশের সাহায্য চাওয়া কি অমূলক হবে । নিঃসন্দেহে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন । পুলিশ প্রশাসনের ফিরে যাওয়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা স্বরূপ ।
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের চলে যাওয়া দেশের জন্য বড় ক্ষত। পাশাপাশি এই বর্বরোচিত হত্যাকাÐের সাথে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা ও মেধাবী। বস্তুতপক্ষে দেশ ও তাদের হারিয়েছে বললে ভুল হবেনা । অবশ্য সরকারের কঠোর মনোভাবের কারনে অভিভাবক মহলসহ জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে । বলাবাহুল্য ২০০২ সালে সাবেকুন্নাহার সনি হত্যা হয়েছিল । গঠিত তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছিল কিন্তু কার্যকর হয়নি। ২০১৩ সালে আরিফ রায়হান দীপকে হত্যার পর তদন্ত কমিটি যথাযথ কাজ করতে সক্ষম হননি, অর্থাৎ আলোর মুখ দেখেনি। বুয়েটসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের অপসংস্কৃতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাÐ বন্ধ করার পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল হতে হবে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ ঠিকানা। আমরা যদি গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করি, তাহলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ অবশ্যই নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সমাজের পথ প্রদর্শক। আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বচ্ছ রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তনের জন্য শিক্ষক মহোদয় ও ছাত্রদের সম্মিলিত প্রয়াস হবে অর্থবহ। নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রাজনীতিক শূন্য হয়ে যাবে ।
২০০৮ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহী এবং জঙ্গি নির্মূলে বর্তমান সরকারের কঠোর মনোভাব দেশে ও দেশের বাইরে প্রশংসিত। সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মকাÐ অব্যাহত থাকবে । ইতোমধ্যে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি রোধে সরকার প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। কতেক অসাধু ব্যক্তি বড় চেয়ারের অপব্যবহার করে নিজেরা লুটেরার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন । দুর্নীতি মামলার জট ছাড়ানো দুদকের পক্ষে কতটুকু সম্ভব জানিনা । তবে দুদকের ভিতরেও দুর্নীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দলের ভিতরে দুর্বৃত্তায়ন,ক্যাসিনো( জুয়া) বাণিজ্য, অর্থ পাচার ও মানব পাচারের মতো অহরহ ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই কারণে জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের টাকা হাতিয়ে নিয়ে যারা রাতারাতি বিত্ত বৈভবের অধিকারী হতে চায়, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এইসব অপকর্মে যারা জড়িত তাদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সমূলে উৎপাটন করা জরুরি। তারা দেশের জন্য কাল কেউটে সাপ, বিষদাঁত না ভাঙ্গা পর্যন্ত তারা ভবিষ্যতেও ক্ষতির কারণ হতে পারে। দুর্নীতি এবং অনৈতিক কাজে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। জাহলামের মতো ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে। নিরীহ মানুষদের হয়রানি করার ক্ষেত্রে পুলিশের বাড়াবাড়ি দুর্ভোগের কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আগে চাঁদাবাজি ও ঘুষ বাণিজ্যের মধ্যে পুলিশ সীমাবদ্ধ ছিল। এখন জন গ্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে ধর্ষণ, ডাকাতি এবং ইলিশ কেলেঙ্কারির মত ঘটনায়ও পুলিশের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতাএক্ষেত্রে গুরুত্ববহ ।
* জনসচেতনতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার সহায়ক শক্তি * অপরাধী যেই হোক আইনের কাছে সোপর্দ করা *দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, কাজেই দুর্নীতিবাজদের ছাড় না দেয়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন হোক * দুর্বৃত্তায়ন সন্ত্রাসের এপিঠ-ওপিঠ, তাই সমাধানও একইরূপ হওয়া বাঞ্চনীয়। * শুদ্ধি অভিযান থাকবে চলমান যা মানুষকে আশান্বিত করে।
লেখক : প্রাবন্ধিক