দেশীয় জ্বালানি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে

9

ক্রমান্বয়ে দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা। কিন্তু সম্পদ বাড়ছে না। চাহিদা মেটাতে বছর বছর বাড়ছে আমদানি নির্ভরতা। মোটা দাগে বলতে গেলে ২০২২ সালে জ্বালানি একটা বড় চিন্তার জায়গা হতে চলেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস ও কয়লা সংকট নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণেও মনোযোগী হতে হবে সরকারকে।
২০২১ সালে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছিল আমদানি করা গ্যাস (এলএনজির) মূল্য পরিশোধে। জ্বালানি বিভাগের হিসাব বলছে, গত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি লেগেছে এ খাতে।
জ্বালানি বিভাগ থেকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে পেট্রোবাংলা আর দেশের গ্যাস বিপণন কোম্পানির ভান্ডারে পড়েছে টান।
বিশেষজ্ঞদের মতে জ্বালানির ওপর ভিত্তি করেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও জ্বালানির পরিকল্পনা থেকে যায় ঘাটতি। সংকটটি নতুন নয়।
পেট্রোবাংলার হিসাব বলছে, দেশে এখন গ্যাসের যে চাহিদা আছে তার এক তৃতীয়াংশ দেশীয় গ্যাস দিয়ে মেটানো হয়। গ্যাস আমদানি করা হলেও দেশের পুরো চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না।
এখন দেশের মোট গ্যাসের চাহিদা দিনে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। আরও যেসব শিল্প আবেদন পড়ে আছে, সেখানে অন্তত হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগবে। কিন্তু দেশে দিনে সরবরাহ করা হয় ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকি এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি হওয়ার কথা থাকলেও তা আসছে না।
গত বছরের শেষভাগে আরেক বড় ধাক্কা ছিল স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়া। সরকার দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য যে চুক্তি করেছে তাতে দেশের মোট চাহিদার অর্ধেক এলএনজি আসে। বাকিটা স্পট মার্কেট থেকে কিনে আনতে হয়।
২০২১-এর শেষাংশে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম হয়েছে ৩৬ ডলার। বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি গুনে পেট্রোবাংলাকে এই এলএনজি আনতে হয়েছে।
কয়লার ক্ষেত্রেও বড় সমস্যা আমদানি নির্ভরতা। এখন দেশের একটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিট চালু হলেও সঞ্চালন লাইন না থাকায় একটি ইউনিট উৎপাদন করছে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেড়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন কয়লা ১৪২ ডলার। বছরের শুরু থেকে শেষে দামের পার্থক্য ৪২ ডলার।
বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতার চাইতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে এ বছরের বড় চ্যালেঞ্জ হবে। গত দুই অর্থবছর বিশ্লেষণে দেখা গেছে- বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পিডিবি বলছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এই বৃদ্ধি চিহ্নিত করা হয়েছে।
যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ছিল ৫ টাকা ৯১ পয়সা সেখানে ২০২১-২২ বছরে বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৬১ পয়সা। ফলে সামনের অর্থবছরে জ্বালানির দাম টালমাটাল হলে বিদ্যুতের গ্রাহকদেরও বাড়তি অর্থ গুনতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘সরকার এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে দামের বিষয়ে প্রথমে যে ধারণা করেছিল, এখন সে পরিস্থিতি নেই। দাম বাড়ছে। আগামিতে কেমন হবে তা বিবেচনা করেই এগোতে হবে। পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনে জোর দিতে হবে’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘সাশ্রয়ী জ্বালানির সংস্থান করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে এখন পায়রায় ৬০০ মেগাওয়াট বসে আছে। সঞ্চালন লাইনের জন্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। লাইনের ওপর এবার জোর দিতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে, চারটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হলেও তা নো পেমেন্ট নো ইলেকট্রিসিটি পদ্ধতিতে চলবে। বাকি রেন্টালগুলোর ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত’।