দুর্ভোগের নাম চকবাজার

152

দুইপাশে অসংখ্য ভাসমান দোকানে সংকীর্ণ সড়ক। যানজটে আটকে আছে গাড়ি। দুর্ভোগে মানুষ, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। একদিন, দুইদিন বা মৌসুমি কোন চিত্র নয়, এটি নগরীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চকবাজারের নিত্যদিনের গল্প। তবুও এ সংকট নিরসনে এগিয়ে আসছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ।
শুধু সড়ক নয়, পুরো এলাকাজুড়ে সড়ক-খাল-নালা দখলে মরিয়া চাঁদাবাজ চক্র। সাধারণ মানুষের চোখে তারা ভয়ঙ্কর, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা যায় না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কী করছে? প্রশ্ন স্থানীয়দের। তারা দায়সারা কর্মকান্ড ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না।
চকবাজারের ধুনীরপুল এলাকা। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের কাঁচা বাজারটির অবস্থান। তবে অনুমোদিত বাজারের চেয়ে রাস্তার উপরই বাজার জমে বেশি। ফলে পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় আর তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই কারোরই।
অভিযোগ রয়েছে, বাজারটি ইজারা নিতে পারলেই পুরো চকবাজার এলাকার ভাসমান দোকান ও হকার থেকে হাসিলের নামে চাঁদা তোলা যায়। যার সাথে ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরাসরি জড়িত।
গুলজার মোড়, অলির খাঁ মসজিদ এলাকা ও কাঁচা বাজার এলাকায় অন্তত ২০ জন হকারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন দেড়শ টাকা থেকে তিনশ টাকা হাসিল তুলে কিছু যুবক। তারা নিজেদের সিটি কর্পোরেশন বাজারের ইজারাদারের লোক বলে পরিচয় দেন। বিষয়টি সরাসরি চাঁদাবাজি হলেও এসব হকারদের কাছে হাসিল হিসেবে পরিচিত। আর এমন হকারের সংখ্যা চকবাজার এলাকায় অন্তত পাঁচশ জন হবে। তাহলে শুধুমাত্র ভাসমান হকার থেকে চকবাজার এলাকায় মাসে ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয়। বাজার ইজারা নিলে এক কিলোমিটার পর্যন্ত ভাসমান দোকান থেকে হাসিল তোলা যাবে যুক্তি দিয়ে এমনটা করে আসছেন ইজারাদার ইদ্রিছ। তবে বিষয়টি অবগত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ধনীরপুল থেকে কেবি আমান আলী সড়কের উভয়পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। আর উচ্ছেদ ফলপ্রসু হওয়ার আগেই ফের দখলের আশঙ্কায় চকবাজারবাসী।
জানা গেছে, চকবাজার কাঁচাবাজার থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত সড়কটিতে দুইপাশে বসে কাঁচাবাজার। এই নিয়ে গত কয়েকমাসে প্রায় পাঁচবাজার উচ্ছেদ অভিযান চলে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার দখল হয়ে যায়। এমনকি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ক্যারাভ্যান কর্মসূচি করেও চকবাজার এলাকার চিত্র বদলাতে পারেননি।
অন্যদিকে বাজার ছাড়া বাইরের কোথাও থেকে হাসিল তোলার সুযোগ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম।
চকবাজার এলাকার দুঃখ কেবল চাঁদাবাজি আর ফুটপাত-সড়কেই সীমাবদ্ধ নয়। সরেজমিন দেখা যায়, কাঁচাবাজার মোড় থেকে উত্তরে নালার উপর নির্মিত হয়েছে সোলায়মান আলম শেঠের মালিকানাধীন শেঠ প্রোপাটিজের অফিস। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালি হলেও নালার উপর থেকে অন্যান্য ভবন সরানো হলেও অজানা কারণে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। ঠিক তার বিপরীতে শেঠ প্রোপাটিজের বালি অর্কিড শপিং সেন্টার নির্মিত হচ্ছে। অন্যদিকে চকবাজার এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে সৌন্দর্যবর্ধন করতে সিটি কর্পোরেশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ শেঠ প্রোপাটিজ।
জানা গেছে, মার্কেটের সৌন্দর্যবর্ধন ও প্রয়োজনে নালা ছোট করতে দ্বিধা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এমনটি নালার ভিতর ১০ ইঞ্চি ওয়াল তৈরি করে স্লেব নির্মাণ করেছে। সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত তদারকি না থাকায় প্রভাব আর শর্তের বেড়াজালে যাচ্ছে-তাই করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এলাকাটিতে রাজনৈতিক ব্যবসার নামে কিছু ব্যবসা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। তারমধ্যে বাজারে পলিথিন, রেস্টুরেন্টে মুরগি, ভাংতি পয়সা সরবরাহের ব্যবসা। যাদের প্রভাব থাকে, তারাই মূলত এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যকেউ এসব ব্যবসা করতে পারেন না। করলে মেরে ফেলার হুমকিও পেতে হয়। এছাড়া কাঁচা বাজারের পাশেই ডায়মন্ড মার্কেটের ছাদে ইয়াবা কারবারি ও জুয়ার বোর্ড বসে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহুল আমিন পূর্বদেশকে বলেন, চকবাজার এলাকার পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। অপরাধীরা নির্বিঘ্নে থাকার সুযোগ নেই। সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত উচ্ছেদ করছে, আমরা সহযোগিতা করছি। এভাবে চলতে থাকলে ফুটপাত-সড়ক অচিরেই পথচারীদের কাছে ফিরে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মাদক আর জুয়ার বোর্ড নিয়ে কোনো ছাড় নেই। মানুষ আমাদের তথ্য দিক, এরপর অপরাধচক্র দমন করা হবে। একই সাথে তথ্যদাতাদের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।