দুর্ভিক্ষ বিতাড়নে দূরদর্শিতা

52

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তাঁর ‘পোভার্টি অ্যান্ড ফেমিনস’ গবেষণা নিবন্ধে বলেন, ‘দুর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে হয় না, হয় বন্টনের অভাবে’। উক্ত নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন যে, “সমাজে প্রতিটি মানুষের ‘এনটাইটেলমেন্ট’ তথা কোনো দ্রব্যসামগ্রী অর্জনের সক্ষমতা রয়েছে। ‘এনটাইটেলমেন্ট’ হলো বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার বিকল্প বান্ডেলগুলোর একটি সংগ্রহ, যেখান থেকে একজন ব্যক্তির নিজের পছন্দের বান্ডেল নির্বাচন করার সক্ষমতা রয়েছে। ধরুন, একজন ভিক্ষুকের জন্য হয়তো একটাই বান্ডেল দেখা যাবে যার অন্তর্ভুক্ত কিছু খাবার ও কাপড়। অন্যদিকে, তুলা উৎপাদনকারী একজন কৃষকের ক্ষেত্রে তার সক্ষমতা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ও একাধিক বান্ডেল দেখা যাবে। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হলো, একজন ব্যক্তির ‘এনটাইটেলমেন্ট’ বেশকিছু কারণে পরিবর্তন হতে পারে। যেমন-দ্রব্যসামগ্রী ও সেবার মূল্যের পরিবর্তন, খাদ্য যোগানের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম-কানুনের বাস্তবায়ন, ফসলে কীটপতঙ্গের বিস্তার বা যুদ্ধের কারণে খাদ্য বন্টনে ব্যাঘাত।” অর্থনীতিবিদদের মতে, দুর্ভিক্ষ হচ্ছে খাদ্য সরবরাহের ঘাটতির কারণে কোনো এলাকার মানুষের অনাহারজনিত চরম অবস্থা। কোনো এলাকায় ফসলহানি ঘটলে এবং সেখানে প্রয়োজন মেটানোর মতো খাদ্য সরবরাহ না থাকলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এছাড়াও খরা-বন্যা-জলোচ্ছ¡াস-অতিবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে গবাদিপশু-ফসল-কীটপতঙ্গের রোগ বা ইঁদুররাও অনেক সময় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী হতে পারে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাচীন বাংলার এই জনপদ বহুবার দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল বাংলা সন ১১৭৬-এ (১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে) যেটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে বহুল পরিচিত। মূলত আঠারো শতকের চলমান চরম অর্থনৈতিক মন্দার ঐ বছরে অতিবৃষ্টি-বন্যায় ব্যাপক ফসলের ক্ষয়ক্ষতি-ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা-খাদ্যবাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের ফলে সার্বিক অবস্থার অপরিমেয় অবনতি ঘটে। ব্রিটিশরাজের কোম্পানি শাসকরা এটিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দাবি করলেও, কোম্পানি শাসনের সহযোগিতায় খাদ্যশস্যের বাজার থেকে মুনাফা লুট এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ে জনমানুষের ভোগান্তী চরম পর্যায়ে পৌঁছে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। এই দুর্ভিক্ষে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১০ মিলিয়ন লোক মারা যায়। ১৭৮৩-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ-ভারতে সংঘটিত দুর্ভিক্ষ থেকে সৌভাগ্যক্রমে বাংলা মুক্ত ছিল। তবে ১৮৮৬ সালে বাংলার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকার কৃষি শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি বহুলাংশে হ্রাস পায়। ঐ সময় প্রথমবারের মতো দুর্ভিক্ষের কারণ এবং সমাধানসূচক পরামর্শের জন্য গঠিত হয় ফেমিন কমিশন। ১৮৯৬-৯৮ সময়ে আক্রান্ত হয় বাংলাসহ বিহার, বোম্বে, অযোধ্যা, মধ্যপ্রদেশ ও পাঞ্জাব। বাংলায় এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টিকে দায়ি করা হয়। এছাড়া বাজারে খাদ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা না থাকায় তা ছিল সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
১৯৪৩ সময়ে বাংলা আরেকটি বৃহৎ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। ১৯৩৮ সন থেকে লাগাতার ফসলহানী-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও আরও কিছু ধ্বংসাত্মক ঘটনা বাংলাকে দুর্ভিক্ষে নিপতিত করে। জাপানিদের দ্বারা বার্মার পতন ঘটায় সেখান থেকে খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ, যুদ্ধাবস্থার কারণে পূর্বাঞ্চলে খাদ্যশস্যের বাণিজ্য ও চলাচলে বিঘœ, প্রাদেশিক-জেলাভিত্তিক কর্ডন প্রথার কারণে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চলাচল বন্ধ, সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং শরণার্থী আগমন ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষকে বেগবান করে। যুদ্ধের শুরুতে মনুষ্যসৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় প্রশাসনের দূরদৃষ্টিহীনতা দুর্ভিক্ষকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। প্রায় সমগ্র বাংলায় এ দুর্ভিক্ষ আঘাত হেনে মোট ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭০ দশকের প্রথমে বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড়-খরা-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য-সার-তেলসঙ্কটের মোকাবেলা করতে হয়েছে। সর্র্বোপরি মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও সামাজিক বিপর্যয়ে দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান নি¤œগামী হয়। সাধারণ অর্থনৈতিক কর্মকাÐ পিছিয়ে পড়ে। এ চরম অবস্থার শিকার হয়েছিল শিল্প শ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষি শ্রমিক এবং নি¤œ বেতনভুক্ত মানুষ। ১৯৭৩ সালে তেল সঙ্কটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে সরকারের পক্ষে খাদ্য আমদানি দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। অধিকন্তু পরাজিত শক্তির দেশীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্তে যথাসময়ে খাদ্যশস্যের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে বাজারে চালের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য, স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণে সমস্যা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী বিশ্ব সম্প্রদায়ের অসহযোগিতা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা আরও জটিল করে তোলে।
১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে খরা, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নীতির ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয় যা ‘সম্মুখগামী মহালম্ফ’ হিসেবে বিপুল পরিচিত। সরকারি পরিসংখ্যান মতে উল্লেখ্য সময়ের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হলেও, অপ্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে দুর্ভিক্ষ পীড়িতের সংখ্যা ২ কোটি থেকে ৪ কোটি ৩০ লক্ষ হতে পারে। ইতিহাসবিদ ফ্রাঙ্ক ডিকোটার অনুমান করেন যে, ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে চীনে অন্তত ৪ কোটি ৫০ লক্ষ লোকের অকাল মৃত্যু ঘটেছিল যার বেশিরভাগই ঘটে অনাহারের ফলে। চীনা সাংবাদিক ইয়াং চিশেঙের মতে, এই দুর্ভিক্ষে অনাহারে একদিকে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ লোক মারা যায়, অপরদিকে ৪ কোটি জন্মগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে মহাদুর্ভিক্ষের সময় চীনের মোট জনসংখ্যা হ্রাস পায় ৭ কোটি ৬০ লক্ষ। গবেষকদের মতে, সম্মুখগামী মহালম্ফের ফলে যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি পরিবর্তন হয় তা ছিল দুর্ভিক্ষের মূল কারণ বা প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের অবস্থার অবনতির জন্য দায়ী। পরবর্তীতে চীনেএই দুর্যোগের নীতিগত ভুলকে স্বীকৃতিদান করে বলা হয়েছে দুর্যোগের প্রাকৃতিক কারণ ছিল ৩০ শতাংশ এবং অব্যবস্থাপনাজনিত কারণ ছিল ৭০ শতাংশ।
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বিশ্ব-সংস্থার মতে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্য সঙ্কট বা দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই বিশ্ব সর্বোচ্চ খাদ্য সঙ্কটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি-৭ ভুক্ত ধনী দেশগুলোর সম্মেলনেও এ বিষয়ে আগাম সতর্কবার্তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ সকলেই একযোগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে এই ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যার ফলে শুধু ইউক্রেন নয় বরং হাজার হাজার মাইল দূরবর্তী দেশসমূহের মানুষেরও মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা প্রচার করে আসছে। ১ জুন ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার মূখপাত্রের ভাষ্য মতে, বিশ্বে আর মাত্র ১০ সপ্তাহ চলার মত গম মজুদ আছে। এরপর দুর্ভিক্ষ আসন্ন। এছাড়াও যুদ্ধের আগে থেকেই শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন ও লিবিয়াসহ আফ্রিকার অনেক দেশেই খাদ্য সংকট চলে আসছে। এসব দেশগুলোতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনানিপাত করে যাচ্ছে লাখ লাখ শিশু। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইরাক, মিশর ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কিছু দেশ।
১৪ মার্চ ২০২২ জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার মতে, ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে পারে, যা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে পাঁচগুন বেশি। রেকর্ড পরিমাণ খরার কারণে ৬০ লাখের বেশি সোমালি নাগরিকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সংবাদও প্রচারিত হয়েছে। সোমলিয়ার মানবিক বিষয়ক বিশেষ দূত গণমাধ্যমে বলেন, ‘ভোক্তভোগী মানুষের এই সংখ্যা দ্রæত সোমালিয়ার জনসংখ্যার অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। সোমালিয়ার ৮৪টি জেলার মধ্যে ৭২টিতেই খরা আঘাত হেনেছে এবং তাদের মধ্যে ছয়টি ইতোমধ্যেই চরম খাদ্য নিরাপত্তা
হীনতার কারণে দুর্ভিক্ষের মতো ভায়াবহ পরিস্থিতিতে পর্যবসিত হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, প্রতিবছর বিশ্বের মানুষের জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয় তার প্রায় দেড়গুন খাদ্য উৎপাদিত হয় এবং বহুবছর যাবত এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর এই খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হচ্ছে বা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি খাদ্য নষ্ট হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ ইউরোপ ও আমেরিকায়। উক্ত সংস্থার আরেক প্রতিবেদন মতে গত ৭ বছরে বিশ্বে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে বেশি হারে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থার মতে, ১৯৬০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৩ বিলিয়নের বিপরীতে ২ দশমিক ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন। ১৯৬০ সালে বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়েছিল ২০২১ সালে এসে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ৩২ গুন। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে অনেক বেশি। খাদ্য উৎপাদন বেশি হওয়া সত্তে¡ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার এবং খাদ্যের অভাবে শিশু ও বৃদ্ধসহ এত মানুষের মৃত্যুবরণের দায়ভাগ কার তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়।
২৮ আগস্ট ২০২২ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আওয়ামী লীগের কোনো আমলেই দেশের কোথাও মঙ্গা দেখা দেয়নি মন্তব্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকার দেশকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে মুক্ত করতে পেরেছে।’ চাহিদা-সরবরাহের অনবদ্য সমীকরণে সরকার শুধু খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলা করে দেশের সকল জনগণকে অনাহারে না রাখার যে ব্রত গ্রহণ করেছিলেন তা পরিপূর্ণ সার্থক করতে পেরেছেন। রূপকল্প ২০২১ এ কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য ঘাটতি দূর করা এবং দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল তা সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ইতিমধ্যে অর্জন করা সম্ভব করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আওয়ামী লীগের অগ্রাধিকার কর্মসূচি বিবেচনায় বিভিন্ন প্রায়োগিক কর্মকৌশল বাস্তবায়নে দেশ খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল-নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের এক অভূতপূর্ব উল্লস্ফন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার গতিশীল-দূরদর্শী-বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমন্ডলে অনন্য উচ্চতায় সমাসীন করেছেন। ফলশ্রæতিতে কৃষিসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
১২ জুন ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘গেøাবাল ফুড আউটলুক-জুন ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদন সূত্রমতে, ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ অবারও বিশ্বের তৃতীয় চাল উৎপাদনকারী দেশে হিসেবে স্থান করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে চার বছর বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, টানা কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টন চাল উৎপাদন করে প্রথমবারের মতো ইন্দোনেশিয়াকে টপকে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে। ২০২১ সালের ৩ কোটি ৭৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের বিপরীতে চলতি বছর উৎপাদন ৬ লাখ টন বেড়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টন। গম উৎপাদনেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী না হলেও বর্তমানে নতুন জাতের বীজ ব্যবহারে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়েছে হেক্টর প্রতি উৎপাদনও। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২ লাখ ১৭ টন থেকে ৩ লাখ ৯ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে দেশে গমের উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টন। বিগত পাঁচ বছরে দেশের গম উৎপাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ। ইতিমধ্যেই পর্যাপ্ত আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানির ব্যবস্থা প্রশংসার দাবিদার। জনগণের প্রত্যাশা; অতীতের মতো যেকোন ধরনের খাদ্য সঙ্কট উত্তরণে বর্তমান সরকার অনন্য বিজয় পতাকা উড্ডীন করবেই।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি