দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের আরও একধাপ অবনতি

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় দুর্নীতি ধারণাসূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানে এক ধাপ অবনমন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। খবর বাংলা ট্রিবিউন। তিনি বলেন, বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কতৃর্ক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২২-এ বাংলাদেশের স্কোর ২০২১ এর তুলনায় এক পয়েন্ট কমে ২৫ এবং নিম্নক্রম অনুযায়ী অবস্থানের এক ধাপ অবনতি হয়ে এখন ১২তম। উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০২১ এর মতো ১৪৭তম। বৈশ্বিক গড় স্কোরের (৪৩) তুলনায় এবারও বাংলাদেশের স্কোর অনেক কম এবং গত এক দশকের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে আছে। অথচ এসময়ে এ অঞ্চলে স্কোর ও অবস্থান বিবেচনায় সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর (২৪) ২০২১ এর তুলনায় আট পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উচ্চক্রম অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় অবস্থানের ২৪ ধাপ উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে গত এক দশকে সরকারি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা সত্তে¡ও কার্যকর কৌশল ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। বাংলা ট্রিবিউন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সিপিআই অনুযায়ী ০-১০০ স্কেলে টানা চার বছর স্কোর অপরিবর্তিত ২৬ থাকার পর ২০২২ এর সূচকে আরও এক পয়েন্ট কমে সর্বনিম্ন ২৫ স্কোর (১২ তম) করেছে বাংলাদেশ। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক এ কারণে যে, ২০১২-২০২২ মেয়াদের দৃশ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে অবনমনের সম্ভাবনার সম্মুখীন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালের সিপিআই অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ৮৭ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নরওয়ে। আর ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নে সোমালিয়া, ১৩ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে ভেনেজুয়েলা।
‘সংঘাত, শান্তি ও নিরাপত্তা’ এবারের সিপিআই-এর প্রতিপাদ্য উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিস্থিতি তথ্য তুলে ধরেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এবারের সিপিআই অনুযায়ী সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বিবেচনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৮০টির মধ্যে ১০৯টি দেশ বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর কম স্কোর করেছে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ১২২টি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে, যার অর্থ এসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক। ২০২১ এর তুলনায় ৭৩টি দেশের স্কোর কমেছে, এর মধ্যে ২৬টি দেশ তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। যাদের স্কোর কমেছে তাদের মধ্যে অনেক এমন দেশ রয়েছে যারা সূচকে তুলনামূলকভাবে উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে। এদের মধ্যে এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক ধরনের অসাধু চক্র বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ ও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং প্রকারান্তরে বৈশ্বিকভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সিপিআই উপস্থাপনায় বাংলাদেশের নিম্ন অবস্থানের ব্যাখ্যা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ। কিন্তু এই মেয়াদে এই ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার যথাযথ কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি।
এবারের সিপিআই অনুযায়ীও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে কম ভুটানে, সূচকে ৬৮ স্কোর পেয়ে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী অবস্থান ২৫তম। এ অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে ছয়টি দেশ এবার ২০২১ এর তুলনায় অধিক স্কোর অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের স্কোর অপরিবর্তিত রয়েছে; বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার স্কোর এক পয়েন্ট কমেছে এবং নেপালের ১ পয়েন্ট ও আফগানিস্তানের স্কোর ৮ পয়েন্ট বেড়েছে।
সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০ এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনও দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি। অর্থাৎ, দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন— এমন দেশগুলোতে কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
সিপিআই অনুযায়ী দুর্নীতির সংজ্ঞা হচ্ছে ব্যক্তিগত সুবিধা বা লাভের জন্য ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার’। সিপিআই নির্ণয়কালে জরিপের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সবোর্চ্চ মান এবং বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।