দুর্দান্ত শুরুর পরও বড় ব্যবধানে হেরে গেল শ্রীলঙ্কা

39

টপ অর্ডারদের বীরত্বে অসাধারণ শুরু করেও জয় পায়নি শ্রীলঙ্কা। গতকাল কেনিংটন ওভালে ভেভারিট অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৬৬ চ্যাম্পিয়নরা। অথচ ৩৩৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ১১৫ এবং তিন উইকেটে ১৮৬ রান করার পরও জয়ের বন্দরে পৌঁছতে পারেনি লঙ্কানরা। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের দানবীয় ১৫৩, স্টিভেন স্মিথের ৭৩ রানে ভর করে ৩৩৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ২৪৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা।
৩৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার শুরুটা বেশ ভালোই করেছেন। দিমুথ করুনারতেœ ও কুশল পেরেরা অজি পেসারদের ভালোই মোকাবিলা করে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৫ রান তুলে নেন। দ্রæত ১২.৪ ওভারে তুলে নেয় দলীয় সেঞ্চুরি। কিন্তু ১৫.৩ ওভারে ব্যক্তিগত ৫২ রানে কুশল পেরেরা স্টার্কের বলে সরাসরি বোল্ড হলে লঙ্কানদের জয়ের ভীত নড়ে যায়। এরপর লাহিরু থিরামান্নে করুনারতেœর সতীর্থ হয়ে ক্রিজে আসলেও তাকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি অজি বোলার বেহরেনডফ। ২৩.৫ ওভারে দলীয় ১৫৩ রানে বেহরেনডফ তাকে উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির ক্যাচ বানান।
যাওয়ার আগে তিনি দলীয় ইনিংসে যোগ করেন ১৬ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস আসলে তাকে নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন দিমুথ করুনারতেœ। কিন্তু তার সেই স্বপ্নে পানি ঢেলে দেন ক্যান রিচার্ডসন। ৩২.১ ওভারে দলীয় ১৮৬ রানে তাকে ম্যাক্সওয়েলের তালুবন্দি করান তিনি।

প্যাভিলনে ফেরার আগে ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন করুনারতেœ। করুনারতেœর আউটটাই মূলত লঙ্কানদের জয়ে আশা পুরে ছাই হয়ে যায়। চতুর্থ উইকেটে অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস ক্রিজে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। ২০৫ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৯ রানে তাকে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেন প্যাট কামিন্স। এরপর একে একে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মিলিন্দা সিরিবর্ধনা (৩), থিসেরা পেরেরা(৭) ও কুশল মেন্ডিসরা (৩০) সাজঘরের পথ ধরলে জয়ের পাল্লা অজিদের দিকে হেলে পড়ে। অবশিষ্ট থাকে শুধু ব্যবধান কমানোর পালা। এর মধ্যে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৬ এবং ইসুরু উদানা ব্যক্তিগত ৮ রানে ফিরে গেলে লঙ্কানদের ইনিংস ৪৫.৫ ওভারে গিয়ে থামে ২৪৭ রানে। অজিদের জয় আসে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে। অজিদের পক্ষে মিশেল স্টার্ক চারটি, ক্যান রিচার্ডসন তিনটি, প্যাট কামিন্স দুটি এবং বেহরেনডফ একটি উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে একদমই সুবিধা করতে পারেননি লঙ্কান বোলাররা। ওপেনিং জুটিতেই ডেভিড ওয়ার্নার আর অ্যারন ফিঞ্চ তুলে ফেলেন ৮০ রান।
১৭তম ওভারে এসে এই জুটিটি ভাঙেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ডেভিড ওয়ার্নারকে (২৬) বোল্ড করেন এই অফস্পিনার। এরপর উসমান খাজাকেও বেশিদূর এগোতে দেননি তিনি। উদানার ক্যাচ হয়ে খাজা ফেরেন ১০ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার তখন ২ উইকেটে ১০০ রান। ওই পর্যন্তই শ্রীলঙ্কার কিছুটা আশা ছিল।
তৃতীয় উইকেটে লঙ্কানদের আশাকে হতাশায় রূপ দেন ফিঞ্চ আর স্টিভেন স্মিথ। ১৭৩ রানের বিশাল এক জুটি গড়ে তুলেন তারা। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের রীতিমত কাঁদিয়ে ছেড়েছেন ফিঞ্চ।
অবশেষে ইনিংসের ৪৩তম ওভারে এসে ভয়ংকর ফিঞ্চকে ফেরান উদানা। ১৩২ বলে ১৫ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় অসি ওপেনার খেলেন ১৫৩ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। কাকতালীয়ভাবে তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসটিও সমান রানের। এর আগে চলতি বছরের মার্চে শারজাহতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হার না মানা ১৫৩ রান করেছিলেন ফিঞ্চ।
ফিঞ্চ ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি জুটির আরেক সঙ্গী স্মিথ। ঠিক পরের ওভারেই ৫৯ বলে ৭ চার আর ১ ছক্কায় ৭৩ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেন লাসিথ মালিঙ্গা।
এরপর ৩ রানে উদানার শিকার শন মার্শ। রানআউটের কবলে পড়েন অ্যালেক্স কারে (৪) আর প্যাট কামিন্স (০)। অস্ট্রেলিয়া অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বসে। তবে এরই মধ্যে গেøন ম্যাক্সওয়েল ঠিকই খেলে দিয়েছেন ঝড়ো এক ইনিংস। ২৫ বলে ৫ চার আর ১ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন ইসুরু উদানা আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।