দু’বছর পর মার্কেটে ঈদের হাসি

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

গেল দু’বছর করোনার ভয়াল থাবায় এক প্রকার লন্ডভন্ড ছিল ঈদের কেনাকাটা। ওমিক্রন ঝড় থেমে যাওয়ার পর এবার ঈদের কেনাকাটায় যেন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণ। করোনার ভয় না থাকায় সরকারি বিধিনিষেধের কবলে পড়তে হচ্ছে না মানুষজনকে। গেল দু’বছর জমিয়ে ব্যবসা তো দূরের কথা ব্যবসার ছিটেফোটাও করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় চট্টগ্রামের ঈদ মার্কেটে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়তি বিনিয়োগ করেছেন। নগরীর প্রতিটি মার্কেট ও শপিংমল ভেতরে-বাইরে সেজেছে নতুন সাজে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ক্রেতা আকর্ষণে নতুন নতুন কালেকশন। বেশ ক’বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দেশের উন্নয়নের চাকা সচল থাকা এবং করোনার ভয় না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করে চলেছেন।
নগরীতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে কাপড়ের পাইকারি মার্কেট টেরিবাজারে। নগরীর অভিজাত মার্কেট রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, স্যানমার ওশান সিটি, আমীন সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, বালি আর্কেড, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনুস্কো সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, চকবাজারে মতি টাওয়ার, মতি কমপ্লেক্স, গুলজার টাওয়ার, চক সুপার, চক ভিউ, আমিন সেন্টার, আগ্রাবাদে আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকি প্লাজা, ঝনক প্লাজা, অলংকার শপিং কমপ্লেক্স, জহুর হকার্স মার্কেট, সিঙ্গাপুর মার্কেট ও পতেঙ্গার বে-শপিং মার্কেটসহ নগরীর অর্ধশতাধিক মাকের্টের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে বাহারি নতুন পোশাক। স্বাভাবিকের তুলনায় ঈদকে সামনে রেখে ৮-১০ গুণ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান জানান, রমজান সামনে রেখে তিন মাস আগে থেকেই টেরিবাজারে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাকসহ প্রসাধনী আইটেম এনেছেন ব্যবসায়ীরা। টেরিবাজারেই অতিরিক্ত কয়েকশ’ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ এবার না থাকায় সরকারি বিধিনিষেধও নেই। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ভয়হীনভাবে কেনাবেচা করছেন। ইতোমধ্যেই ঈদের মার্কেট জমে উঠেছে। আশা করছি ভাল ব্যবসা হবে।
এদিকে নগরীতে বিভিন্ন ফ্যাশন ও বুটিক হাউস এবং নগরীর ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররাও (হকার) পোশাক মজুদ করেছেন পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে। এবারের ঈদ বাজারকে বেশি জমজমাট করে তুলেছে পহেলা বৈশাখের কেনাকাটাও।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতা খুরশীদ আলমের দেয়া তথ্যমতে, ‘চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সকল উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পোশাকের দোকান আছে প্রায় ৬০ হাজার। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে সকল ব্যবসায়ী তাদের দোকানের জন্য পণ্য মজুদ করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম শহরে প্রতি বছর ঈদ বাজারে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়।
এদিকে বন্দরনগরীর মার্কেটগুলোতে অনেককেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা সারতে আসতে দেখা গেছে। নগরীর বড় বড় মার্কেট ও অভিজাত শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের জটলা চোখে পড়ে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, টেরিবাজার, জহুর হকার মার্কেটে মানুষের ভিড় লক্ষ্যণীয় ছিল।
রমজানের প্রথম সপ্তাহেই থান কাপড়, রেডিমেড কাপড় ও জুতোর দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া মার্কেট ও বিপণীকেন্দ্রগুলোর বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেইলার্সগুলোতেও প্রচন্ড ভিড়। সেলাই কারিগররা বলছেন, ঈদের সময় যত সামনে আসছে তাদের ব্যস্ততা তত বাড়ছে। অনেক অর্ডার রয়েছে। সবাইকে যেন সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া যায় সেজন্য এখন দিনরাত কাজ করছেন তারা।
কাপড়ের পাইকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সময়ের বিবর্তনে স্থান করে নিচ্ছে আধুনিক শপিংমল ও মেগাশপগুলো। তীব্র গরম থেকে ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে পাল্লা দিয়ে লাগানো হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। এ কারণে অনেকে আবার উল্লেখিত মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। টেরিবাজারে শাড়ি, থ্রি-পিস, শাটিং স্যুটিং কাপড়ের জন্য আধুনিক শপিংমল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এরমধ্যে পরশমণি, মেগামার্ট, মল-২৪, ভাসাভি, মনে রেখ, বৈঠক বাজার, মৌচাক, বড় বাজার, নিউ রাঙ্গুলি, মাসুম ক্লথ, রাজপরী, রাজস্থান, জারা, সানা ফ্যাশন মল, জাবেদ, মাহমুদিয়া, স্টার ট্রেডিং, আলো শাড়িজ ক্রেতাদের বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এগুলোর বেশিরভাগই ‘এক দাম’র দোকান। ব্যবসায়ীরা জানান, টেরিবাজারে ছোটবড় প্রায় ৮৫টি মার্কেট রয়েছে। এখানে দোকানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
এ বিষয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে একেবারে ব্যবসা বাণিজ্য হয়নি। কিন্তু এবার বেচাকেনায় স্বাভাবিকতা এসেছে। ব্যবসায়ীরাও বেশ বিনিয়োগ করেছেন। কেনাকাটা বেশ জমজমাট হচ্ছে।
অন্যদিকে সুঁইসুতা থেকে শুরু করে পোশাক, ভোগ্যপণ্য, তৈজসপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, প্রসাধন, জুয়েলারি সব ধরনের কেনাকাটায় রিয়াজউদ্দিন বাজারও খুব জনপ্রিয়। ১২০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে সবকিছুই পাওয়া যায়। কম দামে ভাল পণ্যের জন্য ক্রেতাদের পছন্দের বাজার এটি। ঈদ ঘিরে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এ বাজারে ধনী-গরিব সব শ্রেণির ক্রেতার মেলবন্ধন ঘটে। সময়ের বিবর্তনে বন্দরনগরীতে অনেক নামিদামি মার্কেট-শপিংমল গড়ে উঠলেও রিয়াজউদ্দিন বাজার যেন এখনো অপ্রতিদ্ব›দ্বী। পাইকারি থেকে খুচরা- কেনাকাটায় সব শ্রেণির ক্রেতা এখানে আসেন।