‘দুনিয়ার কোনও শক্তিই চীনকে ঝাঁকুনি দিতে পারবে না’

21

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, দুনিয়ায় এমন কোনও শক্তি নেই যা এই মহান জাতিকে ঝাঁকুনি দিতে পারে। এ দেশের মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে চীনা জাতি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। সুতরাং এ জাতির অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ১ অক্টোবর কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারে সামরিক প্যারেডে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শি জিনপিং বলেন, একটি সমাজতান্ত্রিক চীন দুনিয়ার পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে আছে। এই মহান জাতির ভিত্তি কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো কোনও শক্তি দুনিয়ায় নেই। তিনি বলেন, চীনের বিভিন্ন নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী এবং এ ভূখÐের দেশপ্রেমিক মানুষ পুরো দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। চীনের উন্নয়নে সমর্থন জোগানো সব বন্ধু জাতিরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভাষণে ‘শান্তিপূর্ণ’ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন শি জিনপিং।
হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ানের নাম না নিয়েই অঞ্চলগুলোর গণতন্ত্রপন্থী ও স্বাধীনতাকামীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, পুনরায় একত্রীকরণের জন্য বেইজিং প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। হংকংয়ের নাম না নিয়েই তিনি বলেন, চীন সরকার সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশটির স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।
শি জিনপিং বলেন, আমাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন এবং ‘এক দেশ দুই নীতি’র বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। হংকং এবং ম্যাকাও-তে আমরা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখবো। আমরা পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবো। দেশের সম্পূর্ণ পুনর্মিলনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তিতে বেইজিংয়ে চীনা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এ সামরিক কুচকাওয়াজ এবং সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রায় ১০০টি দেশের সামরিক অ্যাটাশেদের।
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং ‘পেশিশক্তি’ প্রদর্শন করছে না। এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না তারা। বরং এর মাধ্যমে ‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করছে বেইজিং। বিবিসি জানিয়েছে, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) খুবই আগ্রহী। এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হংকংয়ে সেনাসংখ্যা
দ্বিগুণ বাড়িয়েছে চীন

গণতন্ত্রের দাবিতে গত প্রায় তিনমাস ধরে আন্দোলনে উত্তাল হংকংয়ে নিরবে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে চীন। বিদেশি দূত ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, হংকংয়ে বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি চীনা সেনা মোতায়েন রয়েছে। বেইজিং গত মাসে সব সীমান্ত দিয়ে হংকংয়ে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে। এর ব্যাখ্যায় চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, হংকংয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মূলভূখÐ থেকে যে অল্প কিছু সেনা মোতায়েন করা হয় তাদের ‘দায়িত্বের পালায় নিয়মিত পরিবর্তনের’ অংশ হিসেবে নতুন সেনা নগরীতে প্রবেশ করেছে। চীনের মূলভূখÐে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে গত জুনে হংকংয়ে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে ওই বিল প্রথমে ‘মৃত’ এবং পরে ‘সম্পূর্ণ বাতিল’ ঘোষণা করার পরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন পুলিশ-আন্দোলনকারী সংঘর্ষের মাত্রা বাড়ছে। গত এক মাসে সাতজন এশীয় এবং পশ্চিমা দূত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করে বলেন, অগাস্টের শেষ দিক থেকে যেভাবে হংকংয়ে (চীনা) সেনা মোতায়েন বেড়েছে সেটি কোনোভাবেই নিয়মিত কাজের পালা পরিবর্তনের অংশ নয়। বরং এটি শক্তিবৃদ্ধি।
ওই সাত বিদেশি দূতের অন্তত তিনজনের বিশ্বাস, জুনে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর হংকংয়ে চীনা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। হংকংয়ে সাধারণত চীনা সেনাসদস্যের সংখ্যা তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে থাকে। কিন্তু তাদের হিসাব মতে, এখন সেই সংখ্যা ১০ থেকে ১২ হাজার। যার অর্থ, ১৯৯৭ সালের পর এটিই হংকংয়ে পিপুলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সবচেয়ে বড় সক্রিয় বাহিনী মোতায়েনের ঘটনা।