দুই সন্তানকে খুন করে মায়ের আত্মহত্যা

38

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথমে সাত বছরের মেয়ে জান্নাত মুনকে হাতের রগ কেটে এবং গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা। এটাই শেষ নয়। একইসাথে আড়াই বছরের ছেলে শান ওরফে বাবুকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে নিজের গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সুমিতা বেগম (২৭)। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টা পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মোহাম্মদপুরের ইসমাইল কলোনীর বাসার দরজা ভেঙে এই তিনটি লাশ উদ্ধার করে।
আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে সুমিতা বেগম নিজের দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। এরপরও তার স্বামী ওষুধের দোকানের মালিক সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
সুমিতা বেগমের বাড়ি সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলায়। আর স্বামী সোহেল রানার বাড়ি একই জেলার রায়গঞ্জে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সাত তলা ভবনের ৩য় তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী সুমিতা ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ব্যবসায়ী সোহেল রানা। সোহেল রানা বাসার পাশে একটি ইউনানি ওষুধের দোকান করেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে তিনি বাসায় গিয়ে অনেক ডাকাডাকি করার পরও দরজা খুলেননি স্ত্রী। এসময় সুমিতা বেগমের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। দারোয়ানের কাছে বাসার অতিরিক্ত চাবির জন্য গেলে কিছুক্ষণ পর দারোয়ান অতিরিক্ত চাবি নিয়ে দরজা খুলতে যায়। এতেও কোনো কাজ হয়নি, কারণ ভেতর থেকে হুক দেয়া ছিল। পরে বাসার জমিদার থানা পুলিশকে খবর দেয়ার পরামর্শ দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে খবর দেন। থানা থেকে পুলিশ গিয়েও দরজায় ধাক্কাধাক্কির পরও দরজা খোলেননি সুমিতা বেগম। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৬ টায় পুলিশ দরজা ভেঙে মা ও দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে মা সুমিতা বেগম ও ছেলে শিশু শানের লাশ ঝুলানো অবস্থায় ও বড় মেয়ে জান্নাত মুনকে খাঁটে পড়া অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
ভবনটির দারোয়ান মো. ফোরকান বলেন, আর্থিকভাবে কোনো সমস্যা ছিল না তাদের। তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে দরজা না খোলায় সোহেল রানা আমাকে জমিদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত চাবিটি এনে দেয়ার জন্য বলেন। আমি চাবি এনে দেয়ার পর দেখি ভেতর থেকে আরও দুইটি হুক লাগানো। পরে নিহতের ননদের জামাই নজরুল ইসলাম ও বাসার জমিদার থানায় খবর দিতে বলেন। থানায় খবর দেয়ার পর পুলিশ আসলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন।
সুমিতা বেগমের ননদের জামাই নজরুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে সোহেল রানা আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাসার দরজায় কয়েকঘন্টা ধাক্কা দিয়েও কোনো সাড়া মিলছে না। পরে তাকে আমি থানায় খবর দিতে বলি। সকালে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
একই ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মাহমুদুল হাসান বলেন, নিহত সুমিতা বেগমের স্বামী সোহেল রানা পরকিয়ায় লিপ্ত ছিল। যার কারণে হয়তো এমন কান্ড ঘটিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝে মধ্যে ঝামেলা হতো জানতাম। তবে দুই সন্তানকে মেরে ফেলবে এমন কিছুই ভাবিনি। তবে সুমিতা বা তার স্বামীর সাথে আমাদের কারো সাথে কথাবার্তা হতো না।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির পূর্বদেশকে বলেন, সুমিতা বেগম পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কারণ দরজা ভেতর থেকে হুক দেয়া ছিলো। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে তাদের লাশ উদ্ধার করে। আমরা সুমিতা বেগমের স্বামী সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। ঘটনার নেপথ্যের বিষয় উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে অশান্তি ছিল। যতটুকু জানতে পেরেছি, তারা পরিবারের মত না নিয়ে বিয়ে করেছিল। যার কারণে পরিবারের সাথে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে। সুমিতার ক্ষোভগুলো ছিল দীর্ঘদিনের, তাই এর বহিঃপ্রকাশ এভাবে করেছে। সুমিতার পরিবার থেকে যদি আত্মহত্যার প্ররোচনা বলে দাবি করে তবে আমরা মামলা নিব বাকিটা তদন্ত করে বলা যাবে।