দুই মন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল ‘রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততায়’

26

দুই মন্ত্রীর ভারত সফর বাতিলের পেছনে ‘বয়কটের’ কোনো বিষয় নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার’ কারণে তারা আপাতত এই সফর স্থগিত করেছেন, পরে আবার যাবেন। ভারতে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দেশটি সফর বাতিল করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। দিল্লি ডায়ালগ ও ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগ উপলক্ষে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের সহযোগিতা নিয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গতকাল শুক্রবার সকালে মেঘালয় যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মন্ত্রীর সফর বাতিলের ঘোষণা আসে। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে পড়েন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জবাবে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল বয়কটের কোনো বিষয় নয়। এটা আমি যতটুকু জানি, বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস একদম আমাদের দুয়ারে সমাগত। রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে তারা ভারত সফরে নাও যেতে পারে। তবে পরবর্তীতে যাবেন’।
ভারতের সাথে সম্পর্কে টানাপড়েন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সফর চিরতরে বাতিল হয়নি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, গঠনমূলক বন্ধুত্ব রয়েছে। এটা যাতে ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব’।
ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব বিল প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারত একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশ। তাদের পার্লামেন্টে যদি কোনো আইন পাস হয় সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের সেখানে মন্তব্য করা সমীচিন নয়। তবে যে বিষয়গুলো আমাদের অ্যাফেক্ট করে বা প্রতিক্রিয়াটা আমাদের কাছে আসে বা আমরা অ্যাফেক্টেড হই, অবশ্যই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, সেখান থেকে অলরেডি বক্তব্য রাখা হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে এর বাইরে আমার কোনো ভিন্ন বক্তব্য নাই’।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা শুধু বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকু বলতে চাই, শেখ হাসিনার সরকারই হচ্ছে পঁচাত্তর পরবর্তী একমাত্র সংখ্যালঘুবান্ধব সরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাঝে মাঝে হয়ত একটা-দুটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এতো মানুষ, এখানে দুর্বৃত্ত আছে। দুর্বৃত্তায়নের চক্র আমরা ভেঙে দিতে চাই। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আসলে কোনো দলীয় পরিচয়ে হয় না। দুর্বৃত্তদের কোনো দল নেই’। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলতে যেটা বোঝায় সেটির দগদগে চিত্র দেখা যাবে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে বর্বরতা হয়েছে তার সঙ্গে। সেটি কেবল একাত্তরের বর্বতার সঙ্গে তুলনা করা চলে’। খবর বিডিনিউজের
সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য বিএনপি দ্রব্যমূল্যের ওপর ‘ভর’ করেছে অভিযোগ করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আজ আমাদের বিরোধীরা চুপচাপ বসে নাই। তারা সরকারকে হটানোর জন্য নানামুখী তৎপরতা করছে। চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যাতে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হয় সেদিকে তাদের একটা যোগসাজশ আছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু কিছু বিষয় আমরা জেনেছি বিরোধী দল থেকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে’।
সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত মোকাবেলায় নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখারও আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। সভায় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক তৃতীয় দফায় বিজয় অর্জন করায় শুভেচ্ছা জানান ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে বাঙালি কন্যা রুশনারা আলী, রুপা হক ও আফসানা বেগমও ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তাদেরও অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।