দুই দশক পর বের হলো সেই নারীর পেটের কাঁচি

19

 

চুয়াডাঙ্গার সেই বাচেনা খাতুনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। বের করা হয়েছে দুই দশক ধরে শরীরের ভেতর বহন করে চলা অস্ত্রোপচারের কাঁচি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সোমবার বেলা ১২টার দিকে এই অস্ত্রোপচার হয় বলে সেখানকার চিকিৎসক ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান।
জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের এই নারীর বয়স এখন ৪৭ বছর। দুই দশক আগে তিনি পেটে ব্যথার চিকিৎসার জন্য যান পার্শ্ববর্তী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়।
গাংনী শহরের রাজা ক্লিনিকের চিকিৎসক তার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করতে বলেন। ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে অস্ত্রোপচার হয়, কিন্তু তার পেটের ব্যথা তো সারেইনি, বরং যোগ হয় অন্যান্য উপসর্গ। দুই দশক পর সম্প্রতি এক্স-রে করলে বাচেনার পেটে একটি কাঁচির সন্ধান মেলে।
চিকিৎসক ওয়ালিউর বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচার করে বাচেনার পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়েছে। এটি অস্ত্রোপচারের কাঁচি। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
এর আগে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হন বাচেনা খাতুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এ কয়দিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। সোমবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয় বলে তার চিকিৎসক জানান।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বাচেনার বরাতে বলেন, ২০ বছর আগে মেহেরপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পিত্তথলির পাথর অপারেশনের সময় চিকিৎসক ভুল করে পেটে কাঁচি রেখে দেন। এজন্য তিনি মাঝেমধ্যে পেটের ব্যথায় ভুগতেন।
বাচেনা খাতুনের স্বামী আব্দুল হামিদ বলেন, ২২ বছর আগে স্ত্রীর পেটে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণে তাকে রাজা ক্লিনিকে নিয়ে যান তিনি। চিকিৎসক জানান, বাচেনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে, দ্রæত অপারেশন করতে হবে। এরপর ওষুধপথ্য ও অপারেশন বাবদ ২০ হাজার টাকার চুক্তি হয় রাজা ক্লিনিকের মালিক পারভিয়াস হোসেন রাজার সাথে।
বাচেনা বলেন, সে সময় রাজা ক্লিনিকের চিকিৎসক বলেছিলেন অপারেশন করে পিত্তথলির পাথর ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর জ্বালা-যন্ত্রণা হবে না। কিন্তু পেট ভারী ভারী লাগত। জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাওয়ার বদলে আরও বাড়তে থাকে। পেটের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে বছরের পর বছর বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছুটেও লাভ হয়নি।
শেষমেষ স্থানীয়দের পরামর্শে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজা নাসিমের শরণাপন্ন হন ওই দম্পতি। সেখানে এক্স-রে করার পর বাচেনার পেটে আস্ত একটি কাঁচির সন্ধান মেলে।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি বাচেনার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
এখন আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজা ক্লিনিকের মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা।
তিনি বলেন, আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। অপারেশনের সময় চিকিৎসক মিজানুর রহমান ও তাপস কুমারের সাথে আমিও ছিলাম। মানুষ মাত্রই ভুল হয়, এটাও ভুল। খবর বিডিনিউজের
অপারেশনের সময় চিকিৎসক মিজানুর রহমান ও তাপস মেহেরপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। বক্তব্যের জন্য মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দীকি বলেন, ঘটনাটি খুবই পীড়াদায়ক। এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিচার চেয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলায় অবৈধ ও অনুনোমোদিত যেসব ক্লিনিক রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।