দুই ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ

21

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগকর্মী তাপস হত্যার বিচারের দাবিতে মৌন মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। গতকাল রবিবার ‘শহীদ তাপস স্মৃতি সংসদের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার স্ষ্ঠুু পরিবেশ বজায় রাখতে চার দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ।
রবিবার দুপুরে শাহ আমানত হল থেকে মৌন মিছিল শুরু করেন শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী। মিছিলটি বিশ^বিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট ও শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁেধ বিচারের দাবি জানিয়েছেন। কর্মসূচি পালন এই অংশটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ‘শহীদ তাপস স্মৃতি সংসদের’ আহব্বায়ক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আদনান সৈকতের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন চবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও তাপসের সহপাঠী শরীফ উদ্দীন, সংসদেও যুগ্ম আহব্বায়ক মির্জা খবির সাদাফ ও ইয়াসিন রুবেল প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বুয়েটে আবরার হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও তাপস হত্যার জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপসের মত ১৭ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। যার একটিও বিচার হয়নি। আমরা দ্রæত এসব হত্যার বিচার চাই। তাপস হত্যার চার্জশীটভুক্ত আসামিরা প্রশাসন এবং পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে। এ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাপসের পরিবার। আমরা অতি শীঘ্রই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো আমরা।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে চার দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ। ছাত্রলীগের এ অংশটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়, শহীদ আব্দুর রব হলে ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলার নেতৃত্ব দানকারী সুমন নাসির ও আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান খাঁন রাফিসহ জড়িত সকলের গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার। পুলিশ ও প্রক্টরের গাড়ি এবং জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ওয়াচ-টাওয়ার ভাঙচুরকারীদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপ-প্রচারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান এবং বাহিরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করার জন্য আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মনছুর আলম, সাবেক সহ সভাপতি আবদুল মালেক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল, সাবেক উপ-বিজ্ঞানও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান দিনার, সাবেক উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইমাম উদ্দিন ফয়সাল ফারভেজ, ছাত্রলীগ নেতা মো. ফয়সাল ও প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়।
এর আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ নভেম্বর রাত থেকে তিন দিনে কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে বগি ভিত্তিক উপগ্রæপ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের’ (সিএফসি) ও ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেসের’ (ভিএক্স) নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হাটহাজারী উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় সিএফসি উপগ্রæপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন সুমন ও ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান রাফিকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। এই খবরে দুই পক্ষ আবারো সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ কাদানো গ্যাস নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে থাকা পুলিশের চারটি গাড়ি, প্রক্টরের একটি গাড়ি ও ওয়াচ-টাওয়ারে ভাংচুর চালানো হয়। পরে দুই ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার মদদদাতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের (ছাত্র উপদেষ্টা) পরিচালক অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলাহকে দায়ী করে তার পদত্যাগ, হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কারের দাবিতে অবরোধের ডাক দিয়েছিল সিএফসি উপগ্রূপের নেতাকর্মীরা। পরে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতির সফর উপলক্ষে অবরোধের প্রথম দিন গত সোমবার সকালেই অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। তবে একই দাবিতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছিল সিএফসি উপগ্রূপের নেতাকর্মীরা। এছাড়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গত মঙ্গলবার হাটহাজারী মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে ছাত্রলীগের বিবাদমান পক্ষ দুটি। এদিকে এসব ঘটনা তদন্তে গত ৫ ডিসেম্বর তিন সদস্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের উপগ্রæপ ভিএক্স ও সিএফসির মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সিএফসি কর্মী ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।