দীর্ঘদিন এ প্রতিষ্ঠানটি একটি চক্রের হাতে জিম্মি ছিল

32

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম একটি গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ছিল। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাদের অনেকেই ইসলামকে ব্যবহার করে মনে সংকীর্ণতার চাষ করেছেন। অথচ ইসলাম সহনশীলতার চর্চা করতে শিক্ষা দেয়। বর্তমানে যাদেরকে দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন হয়েছে তারা অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন’।
গতকাল রবিবার আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ৫ম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইআইইউসি’র ক্যাম্পাসে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চ্যান্সেলর মনোনীত হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ হতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের এক থেকে দুই শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হতে পারে। কিন্তু বাকিরা দক্ষতা না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে’। তিনি শিক্ষার্থীদের কর্ম উপযোগী হিসেবে শিক্ষকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ হতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের এক থেকে দুই শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হতে পারে। কিন্তু বাকিরা দক্ষতা না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে’।
শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে আইআইইউসি’র সুনাম রয়েছে সারাদেশে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশে পাঠদান চলে’।
তিনি শিক্ষার্থীদের কর্ম উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘সেখান থেকে পাশ করে অনেকে দক্ষতা না থাকার কারণে ভাল চাকরি করতে পারছে না। তাই তাদের দক্ষতা বাড়াতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষকদেরও উচিৎ শিক্ষার্থীদের সেভাবেই গড়ে উঠতে কাজ করা’।
শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে আইআইইউসি’র সুনাম রয়েছে সারাদেশে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশে পাঠদান চলে’।
তিনি বলেন, ‘আইআইইউসি ইসলাম ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। তবে ইসলাম ও মওদুদীবাদ এক নয়। মওদুদীবাদ সংকীর্ণতা ও অস্থিতিশীলতার শিক্ষা দেয়। পাকিস্তান আমলে ইসলাম ও রাজনীতিকে এক করা হয়েছিল। যার কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু এই অস্থিতিশীলতা থেকে বাঙালির মুক্তির জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মহীনতা এক নয়। বর্তমান সরকার ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ। অতিথি ছিলেন আইআইইউসি উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শরীয়াহ্ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শাকের আলম শওক, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আকতার সাঈদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ বিতরণ করা হয়। এদের মধ্যে স্মাতক পর্যায়ে ৯ হাজার ৪৫৯, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫ হাজার ৯০২ জনকে।
চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হয় ৩৬ শিক্ষার্থীকে। এছাড়া ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ১৩৭ জন শিক্ষার্থীকে।
আইআইইউসি এই সমাবর্তনে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করেছে বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান স্বর্ণপদক। প্রথমবারের শরীয়াহ্ অনুষদের শিক্ষার্থী জোবাইদুন নাহার পান্নাকে এ পদক দেওয়া হয়।
বেলা ১১ টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে
সমাবর্তন বক্তৃতায় ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। যার যে বিষয় ভাল লাগে সে সব বিষয় পড়তে হবে। যেমন আজকে যারা ব্যবসায় অনুষদের ডিগ্রী নিয়েছেন তারা অর্থনীতি কিংবা কাছাকাছি কোনো বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন’।
গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা অতি আধুনিকতার নামে সমাজ ও পরিবারের কথা ভুলে যাচ্ছি। আমাদের পিতা-মাতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে’।
আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন বলেন, ‘আইআইইউসি’র গ্র্যাজুয়েটরা আলোকবর্তিকা। তারা দেশজুড়েই কেবল নয়, বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে যখন আমি যাই, তখন আইআইইউসি’র গ্র্যাজুয়েটদের সাথে আমার দেখা হয়। তখন আমার গর্ববোধ হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমি আইআইইউসি’র জন্য অনুদান এনেছি। আইআইইউসি দেশের উচ্চ শিক্ষায় আজ অনন্য অবদান রাখছে’।
তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আশপাশের এলাকায় আজ সরকারের টাকায় পিচঢালা সড়ক হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বয়ে চলা খালে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখান থেকে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি ব্যবহার করা যাবে। এই খাল একটি মিনি হাতির ঝিল হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এটি একটি পিকনিক স্পট হবে। ভবিষ্যতে গ্র্যাজুয়েটরা এসে এখানে অনুষ্ঠান করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পরিবহন চালু আছে। যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করে। যেটি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নানা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। যার প্রমাণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের মে ও জুন মাসের দিকে আরেকটি সমাবর্তন করার ইচ্ছে আমাদের রয়েছে। তখন এসে দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কি আমুল পরিবর্তন ঘটেছে’। বিজ্ঞপ্তি