দিনভর সেবা বন্ধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সব ধরনের রোগ নির্ণয় সেবা বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সেবা না পেয়ে রোগীরা ভিড় করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ফলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে সেবা প্রার্থীদের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। সেবা বন্ধ করে চিকিৎসকদের প্রতিবাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা। তবে আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা ও রিপোর্ট সরবরাহ চালু ছিল।
নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের গেটে সেবা বন্ধের ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে আগে করা রোগ নির্ণয় রিপোর্ট সরবরাহ চালু রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের সামনে কয়েকজন রোগীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে রিপোর্ট দেখাতে এসে পড়েছেন বিপাকে। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা না পেয়ে রোগীরা ছুটে গেছেন চমেক হাসপাতালে। রোগীর চাপ বাড়ায় সেখানেও সেবা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ নামে এক রোগীর স্বজন পূর্বদেশকে বলেন, আমার ভাতিজার রিপোর্ট দেখাতে এসেছি গ্রাম থেকে। পার্কভিউ হাসপতালে সোমবার দেখানোর কথা থাকলেও ডাক্তার বসেননি। আজও (মঙ্গলবার) চেম্বার বন্ধ। দুইদিন যাবৎ ঘুরছি কোনোভাবেই রিপোর্টগুলো দেখাতে পারছি না। ছোট বাচ্চা হওয়ায় যথাসময়ে চিকিৎসা পাওয়ায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। চিকিৎসা সেবা বন্ধ করা তো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা বন্ধ থাকায় চমেক হাসপাতালে ছুটে যান রোগীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন রোগী। একই চিত্র দেখা দেখা গেছে আউটডোর ও প্যাথলজি বিভাগেও। পরীক্ষা করাতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, বেসরকারি হাসপাতালে সেবা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের আউটডোর ও প্যাথলজি বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্যাথলজি বিভাগে চাপের বিষয়টি মাথায় রেখে আগে থেকেই লোকবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের অবস্থা স্বাভাবিক ছিলো।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শরীফ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হলেও একদিন পরই জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। ডাক্তারদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? হামলাকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এটা তো কাম্য নয়। আমরা অবলিম্বে হামলাকারীরদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কাল আমাদের একটা সভা আছে। ওই সভায় আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ডা. রক্তিম দাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডা. রিয়াজ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনো শঙ্কা মুক্ত নন। তাছাড়া এ ঘটনায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন।
এ দুই ঘটনার জের ধরে গত ১৮ এপ্রিল চমেক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে মানববন্ধনে যোগ দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও পেডিয়াট্রিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমিতির নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন থেকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ২৩ এপ্রিল দিনব্যাপী সর্বাত্মক প্রাইভেট চেম্বার বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।