দা-চুরি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারেরা

221

ঘামছে কামার, পুড়েছে লোহা, তৈরি হচ্ছে দা, ছুরি, বটি। অথচ সপ্তাহ খানেক আগেও স্থানটি ছিল প্রায় নিরর। কোরবানিকে সামনে রেখে হয়ে উঠেছে সরব। তাই ভাঁতির ফাসফুস আর হাঁতুড়ি পেটার ঠুকঠাক ও টুং টাং শব্দে মুখর কামারশালাগুলো। হাতুড়ির টুং টাং শব্দে যেন আর থামছে না। কয়েকদিনে এমন ব্যস্ততা বেড়েছে হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার প্রতিটি কামারের দোকানেগুলোতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার অধিকাংশ বাজারে কর্মকাররা পশুর মাংস কাঁটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, বটিসহ কিছু ধারালো জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসব জিনিস চাহিদামতো সরবরাহে কামার শিল্পীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা দিবরাত্রি অবিরত মাংস কর্তন সামগ্রী তৈরিতে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। পুরানো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা থেকে ধারালো মাংস কর্তনসামগ্রী তৈরির কাজ। এক্ষেত্রে লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা পাঁচশ টাকা, নরমাল তিনশ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা, দাঁ আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা, বটি সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি পাঁচশ থেকে এগারোশ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান কামাররা।
এছাড়াও বিভিন্ন সাইজের দা, ছুরি লোহার ওজনের উপর ভিত্তি করেও বিক্রি করা হচ্ছে। ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় কিরিচ, ধামায় শান দেয়ার জন্য ৪০ টাকা থেকে কাজের গুণাগুনের উপর ভিত্তি করে ১৮০ টাকা পর্যন্ত, ছুরি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। কুরবানি উপলক্ষে দা-ছুরি মেরামত করতে আসা স্কুল শিক্ষক ছৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর জানান, দেশের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে এই চট্টগ্রামের মানুষ বেশ ভোজন প্রিয়।
দেশের একটি বৃহৎ অংশ কোরবানি হয় চট্টগ্রামে। এরমধ্যে হাটহাজারী উপজেলা অন্যতম। তা সকলে কোরবানিতে পশুর মাংস গুলোকে কাঁট চেরা করার জন্য দা, বটি, ছুরি, ধামা, কিরিচ ইত্যাদি মেরামত করতে এ সময়ে কামারশালায় ভিড় করে, আমিও আসছি। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় কামারা পশুর মাংস কাঁটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ধারালো জিনিস কিনতে ও শান দিতে একটু বেশি দাম নিচ্ছে। এদিকে কাজের ফাঁকে পৌর এলাকার কাচারী রোডের মাইকেল দে (৪৫) নামে এক কর্মকারের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, পৈত্রিক সূত্রে এ পেশায় আসা। দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন।
কোরবানি এলে কাজ বাড়ে। তবে অনেক গ্রাহক সঠিক মূল্য দেন না। এরমধ্যে করোনাকালে ক্রেতা সমাগম বিগত বছরের তুলনায় অনেকাংশে কম। তৎমধ্যে উচ্চ মূল্যে কয়লা, লোহা ও স্টিলের মালামাল কিনে ক্রেতা কম থাকায় বিনিয়োগকৃত পুঁজি উঠানো নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। এছাড়া হাটহাজারী বাজারের গৌতম কর্মকার (৫০) জানান, সারা বছর কাজ খুব কম থাকে। কোরবানি এলে কাজ বাড়ে। অনেক গ্রাহক সঠিক মূল্য দেন না। বর্তমানে কয়লার দামও বেশী। দা, ছুরিতে সান দেয়ার আগে আগুনে পোড়ানের জন্য কয়লা অতি প্রয়োজনীয়। তবে উচ্চ মূল্যে কয়লা, লোহা ও স্টিলের মালামাল কিনে প্রত্যাশা নিয়ে হাটে-বাজারে ক্রেতা না থাকায় এসব সরঞ্জাম বিক্রি কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকৃত পূঁজি উঠানো নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছি। তাই এ শিল্প যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতার কামনা করেন।