দাম্পত্যের আগুন জীবন দিয়ে নেভাল ডা. অদিতি

70

পূর্বদেশ ডেস্ক

চিকিৎসক অদিতি সরকার ‘স্বামীর ওপর রাগ করে’ নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিলেন। পাঁচ দিন হাসপাতালে থাকার পর মারা গেলেন ৩৮ বছর বয়সী এই চিকিৎসক। গত শুক্রবার থেকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন চিকিৎসক অদিতি সরকার। আগুনে তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। গতকাল বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অদিতির মৃত্যু হয় বলে বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান। খবর একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার
মিটফোর্ড হাসপাতালের নবজাতক শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার অদিতি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৩১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে হেয়ার স্ট্রিটের বাসায় নিজের গায়ে আগুন দেন অদিতি।
ওয়ারি থানার ওসি কবির হোসেন হাওলাদার সেদিন বলেছিলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে রাগারাগি করে অদিতি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন বলে বার্ন ইনস্টিটিউটের ডাক্তারদের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। বাসায় জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের স্পিরিট ছিল। সেগুলো ঢেলেই তিনি গায়ে আগুন লাগিয়েছেন বলে স্টেটমেন্টে উল্লেখ করেছেন।এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি।’
অদিতির স্বামী প্রকৌশলী মানস মন্ডলের দাবি, তার স্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে ‘অসুস্থ ও আপসেট’ ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে বাসায় ফিরে জামাকাপড় পাল্টানোর সময় তিনি পাশের ঘরে স্ত্রীর চিৎকার শুনতে পান। গিয়ে দেখেন অদিতির শরীরে আগুন জ্বলছে। বাথরুমে নিয়ে তার শরীরে পানি ঢালেন। এরপর ৯৯৯ নম্বরে কল করে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে অদিতিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। ঘটনার সময় তার দুই সন্তানসহ পরিবারের লোকজন বাসাতেই ছিলেন বলে জানান তিনি।
আত্মহত্যার ব্যাপারে এক তথ্যে জানা গেছে, দেশে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করছেন। আর বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা। এমনকি বিত্তবানেরাও আত্মহত্যা করছেন। আত্মঘাতী হওয়ার এই প্রবণতা কেন?
সম্প্রতি ঢাকায় ফেসবুক লাইভে এসে আবু মহসিন খান নামের এক ব্যবসায়ীর নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। উঠে এসেছে নগর জীবনের নিঃসঙ্গতার কথা। তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর হওয়ায় আলোচনাটা হয়তো একটু বেশি হয়েছে। অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়ঘর এলাকায় সুমন নামের এক যুবক ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে ফেসবুক লাইভে এসে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন পুবাইলের স্বপন চন্দ্র দাস নামের এক ব্যবসায়ী। ৭ ডিসেম্বর সবুজ সরকার নামে কুমিল্লার এক তরুণ ফেসবুক লাইভে এসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় আত্মহত্যাজনিত অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে দুই হাজার ১৬৬টি। আর আত্মহত্যার হার দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে করোনার সময় এই প্রবণতা বেড়ে গেছে।
বিবিএস বলছে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৪ হাজার ৪৩৬টি। করোনার সময় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আবু মহসিন খানের আত্মহত্যার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে হঠাৎ করে নয়, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার মৃত্যুর পর মানুষ কীভাবে ঘরে ঢুকবে তার ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছিলেন। এটা একাকীত্ব থেকে গভীর বিষন্নতার ফল। তারা বলেন, আবার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার একটি ঘটনা যখন প্রচার পায় তখন অন্যদের প্রভাবিত করে। আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে যদি পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয় তাহলে আরেকজন আত্মহত্যার যুক্তি খুঁজে পায়। তাই সবার সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্যও যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতই গুরুত্বপূর্ণ তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। পৃথিবীতে নগরেই আত্মহত্যা বেশি ঘটে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ছে। প্রযুক্তি মানুষকে যেমন সচেতন করে তেমনি আত্মহত্যাপ্রবণ করে। ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার মধ্যে কেউ ‘বীরত্ব’ খুঁজে পেতে পারেন বলে মনে করেন মনোচিকিৎসকরা।
অনেকেই মনে করেন, আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। আর এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বের চিত্র। এর বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণেও মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিজেকে যখন কেউ অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, জীবন অর্থহীন মনে করেন তখন আত্মঘাতী হন। তবে এইসব কারণের মূল উপাদান রাষ্ট্র ও সমাজেই বেশি।