দামের ঊর্ধ্বগতিতে অস্থির রডের বাজার

54

ফারুক আবদুল্লাহ

অবকাঠামো খাতের প্রধান উপকরণ রডের দাম নিয়ে বাজারে স্বস্তির কোনো খবর নেই। গত একবছর ধরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে রডের দাম। এতে আবাসন খাতের ৭০ শতাংশ কাজ কমে গেছে। এতে সরকারি নির্মাণ প্রকল্প গতি হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ভালোমানের (৬০ গ্রেডের ওপরে) প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭৮ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। আর গতবছরের একই সময়ে প্রতিটন এই রড বিক্রি হয়েছিল ৬৫-৬৬ হাজারে। একবছরের ব্যবধানে রডের দাম ১২ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। তাছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে ভালোমানের রড বিক্রি হয়েছিল টন ৫৩-৫৪ হাজার টাকায়।
ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম’র সিনিয়র জিএম (সেলস এন্ড মার্কেটিং) জসিম উদ্দীন বলেন, বর্তমানে আমাদের কোম্পানির ভালোমানের প্রতিটন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকা (মিল প্রাইজ)। এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয়েছে টন ৭৭ হাজার ৫০০ টাকায়। অথচ ২০২১ সালে এই সময়ে টন ৬৫-৬৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত বছর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে বিদেশ থেকে আসা সব পণ্যবাহী জাহাজকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছিল। কোয়ারেন্টিন শেষে পণ্য খালাস করার ফলে জাহাজভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর রডের কাঁচামালের তীব্র সংকট ও জাহাজ ভাড়া ৩-৫ গুণ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়। তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় ২-৩ মাস ধরে ফ্রেইট চার্জ কম ছিল। এখন আবার ফ্রেইট চার্জ বাড়বে। ফলে রডের বাজারে আবারও প্রভাব পড়বে।
এদিকে গত কয়েক মাসে নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতের মূল কাঁচামালের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গৃহীত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় সামাল দিতে রড আমদানির অনুমতি চেয়েছে ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠনটি। সরকারি প্রকল্পে স্থানীয় ঠিকাদারদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি নীতিমালার কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেলে ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান করার অনুরোধ জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে দেশের নির্মাণসংশ্লিষ্ট পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও নির্মাণ খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, রডসহ নির্মাণসামগ্রীর দামের উর্ধ্বগতির কারণে আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ কাজ কমে গেছে। এর কারণে ফ্ল্যাটের দাম যে বাড়াব সেই ধরনের পরিস্থিতিও নেই। করোনা মহামারির কারণে স্বাভাবিক ভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই এসব কিছু চিন্তা করে বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে।
দেশে বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন ইস্পাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ টনের। রড তৈরির কাঁচামাল প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করে দেশীয় উৎপাদকেরা। বাকি প্রায় ৩০ শতাংশ জাহাজভাঙা শিল্প থেকে আসে। আর দেশে স্বয়ংক্রিয় ইস্পাত কারখানা আছে ৪২টি। সনাতন পদ্ধতির কারখানা ১০০টির মতো। ইস্পাত খাতে রডসহ সবধরনের উৎপাদিত পণ্যের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। দেশে একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ইস্পাত শিল্পে।
নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার স্টিল প্লাসের স্বত্ত¡াধিকারী রাসেল জানান, এখন পাইকারিতে টন প্রতি রড বিএসআরএম ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা, কেএসআরআম ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, একেএস ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা, জিপিএইচ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং গোল্ডেন ইস্পাত ৭৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নন ব্র্যান্ডের রড গড়ে ৬৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত এক সপ্তাহ আগে এসব ব্র্যান্ডের রড ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গতবছরের এই সময়ে উল্লেখিত রডগুলো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।