দামবৃদ্ধি ও ভেজাল পণ্য বিক্রি রমজানের শিক্ষার বিপরীত

50

মাহে রমজানুল মোবারক মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। তবে আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে পরিলক্ষিত হবে, আমরা মাহে রমজানের শিক্ষার বিপরীতে চলছি।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এদেশে অন্তত রমজানুল মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ত্যাগের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য জনসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখা উচিৎ। কিন্তু আমরা প্রতিবছর দেখি উল্টো চিত্র।
অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ফলে রোজার নিত্য অনুষঙ্গ সেহরি ইফতারের সাথে সম্পর্কিত খাদ্য-দ্রব্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণ গরীব রোজাদারের নিদারুণ কষ্ট হয়। এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো, ওজনে কারচুপি করা, ভেজাল দ্রব্য বিক্রি করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি খাদ্য-শস্য মজুদ করার ফলে বাজারে এর দুষ্প্রাপ্যতা হয় এবং এ কারণে দাম বেড়ে যায়, তাহেল সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। মজুতদারীর ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষতুœ হয়, এজন্য ইসলামী শরীয়তে একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) মজুতদারকে পাপী ও অভিশপ্ত বলেছেন।
ধর্মের উপরোক্ত মর্মবাণীগুলো ব্যবসায়ী সমাজ আমলে না নিয়ে প্রতিবছর রোজা আসলেই শুরু করে উল্টো দিকে যাত্রা। সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তৃণমূল পর্যায়ে এর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। ফলে জনসাধারণের ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রতি বছর। অথচ এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ লোক মুসলমান এবং ব্যবসায়ী সমাজের বিরাট অংশও মুসলমান। তবুও এ ধরনের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, কৃত্রিম সংকট, ভেজাল পণ্য বিক্রির মতো জঘন্য কর্মকাÐ অত্যন্ত লজ্জাজনক বটে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ভেজাল পণ্য বিক্রি রমজানের শিক্ষার বিপরীত, অথচ অমুসলিম দেশ আমেরিকায় তাদের ধর্মীয় বড়দিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ও ভোগ্য পণ্যের উপর বিশাল মূল্যহ্্রাস দেয়া হয়। যাতে ধনী-গরীব সকলে সমানভাবে আনন্দে উৎসব পালন করতে পারে। তাহলে নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে আমরা আজ কোথায় দাঁড়িয়েছি- একবার ভেবে দেখা উচিৎ। অতএব এ পবিত্র মাসের অন্তর্নিহিত শিক্ষা ধৈর্য, ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনের মহান ব্রত নিজের মধ্যে জাগরুক করতে হবে- এটাই সময়ের দাবি।
সবাই মাহে রমজানুল মোবারকের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবিক সমাজ গঠনে ভ‚মিকা পালন করলে, তবেই আমরা সার্থক হবো। মাহে রমজান মুমিন মুসলমানদের মাঝে হাজির হয় ধৈর্য, সহমর্মিতা, ঐক্য, সৌহার্দ্য ও মানবতার দাবি সকলের মাঝে জাগ্রত করতে। তাই সকল মুমিন মুসলমানের উচিৎ রমজানের অন্তনির্হিত তাৎপর্য ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।