দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে

12

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, ‘যারা দলের নাম ভাঙিয়ে নানা ধরনের চাঁদাবাজি করে, মানুষকে হয়রানি করে, তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে বিশেষ করে মানুষের জায়গা দখল, মানুষকে চোখ রাঙানো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা কালেকশনসহ এধরনের অপকর্ম যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
তিনি বলেন, ‘শরীরের কোন অংশ পচে গেলে যেমন কেটে ফেলে দিতে হয়, আমরাও সেভাবে ব্যবস্থা নেবো। সুতরাং সবাই সাবধান হয়ে যাবেন। এক মাস সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি তারা পরিবর্তন না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর আর এ বি এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্কুল মাঠে আয়োজিত মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। উদযাপন কমিটির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন, মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী, সদস্য সচিব ডা. ওয়াকিল আহমদ, যুগ্ম সচিব মোর্শেদুল হক চৌধুরী, পেয়ার উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, মঞ্জুর মিয়া, কামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্কুল গড়ার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।
কিন্তু সুন্দর অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে একটি স্কুলের মানোন্নয়ন বুঝায় না। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশাত্মবোধ, মমত্ববোধ এবং গুরুজনদের প্রতি কর্তব্যবোধ এসব শেখাতে হবে। এসব আমাদের সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে। মানুষ ক্রমাগতভাবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে মানুষ ক্রমাগত স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের এগুলো থেকে রক্ষা করতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, স্কুলের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে স্কুলে কতটুকু নৈতিকতা কিংবা দেশাত্মবোধ শিক্ষা দেয়া হয়, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ সহমর্মিতা কতটুকু শিক্ষা দেয়া হয়, মেধা, মূল্যবোধ এবং দেশাত্মবোধের সাথে শিক্ষার্থীদের সমন্বয় ঘটানোর কোন কার্যক্রম আছে কিনা সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। আমি ঠিক করেছি এটি বোর্ডে আমি চিঠি দিয়ে জানাবো। শুধুমাত্র ভাল রেজাল্ট একটা ভাল মানুষ তৈরি করে না। এমন একটি স্কুল কিংবা বিদ্যানিকেতন চাই, যেখানে সঠিক মানুষ তৈরি করে। যার কাছে আত্মকেন্দ্রিকতা থাকবে না, স্বার্থপরতা থাকবে না। মেধা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ, দেশাত্মবোধের সমন্বয়ে ভাল মানুষ তৈরি করবে, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরা চাই।’
রাজানগর আর এ বি এম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই র‍্যালি, স্মৃতিচারণ, সম্মাননা প্রদান, ম্যাগাজিন প্রকাশনা, র‍্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে বিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়ার ১০৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। একই দিনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। অনেকেই এখন এসে বড় বড় কথা বলবে।
কিন্তু জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় যারা ছিল না, তাদের প্রত্যাখ্যান করুন। এদিন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রাঙ্গুনিয়ার ১০৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসলে যারা এসে বড় বড় কথা বলে, তাদের জিজ্ঞেস করবেন করোনার সময়, বন্যার সময় কিংবা নানা দুর্যোগের সময় তারা কোথায় ছিল। ’
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, হোছনাবাদ, লালানগর, দক্ষিণ রাজানগর, রাজানগর এবং পারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদারসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৪ বছর আগে মরিয়মনগর ডিসি সড়কটি ছিল কাচা। রানিরহাট থেকে মরিয়মনগর চৌমুহনী একবার গেলে প্যারাসিটামল টেবলেট খেতে হতো। গর্ভবতী নারী হলে সন্তান প্রসব হয়ে যেতো। এসব কোন গল্প নয়, বাস্তবতা। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সড়কটি কার্পেটিং করে দিয়েছি। প্রতিবছর বছর সড়কটি সংস্কার করা হয়। এভাবে পুরো রাঙ্গুনিয়া উন্নয়নে বদলে গেছে।
আজ থেকে ১৪ বছর আগের রাঙ্গুনিয়া আর এখনকার রাঙ্গুনিয়ার চিত্র মেলালেই তা বুঝা যাবে। অলিগলির সড়কও এখন পাকা সড়ক হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শত ব্যস্ত থাকার পরও প্রতি সপ্তাহে একবার-দুইবার করে এলাকায় এসেছি। গত ১৪ বছর ধরে কে কোন দলের তা দেখিনি। দলমত নির্বিশেষে সকলের উপকারে আসার চেষ্টা করেছি। সবার জন্য আমার দরজা খোলা রেখেছি। আমি যখন আপনাদের দয়জায় আসবো, আপনারাও আমার জন্য আপনাদের দরজাটি খোলা রাখবেন।’