দর্শনার্থী বেড়েছে রিছাং ঝর্নায়

2

খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে
প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে পাহাড়ি ঝর্নাধারা। ঢালু গড়িয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ। তার চারদিকে উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে। আর হিমশীতল জলরাশির কাছে গেলে এক স্নিগ্ধতায় ভরে উঠবে শরীর ও মন। খাগড়াছড়ির অন্যতম আশ্চর্য ‘রিছাং ঝর্না’য় না গেলে কেউ বুঝবেই না প্রশান্তি কি জিনিস। বর্তমানে শীত মৌসুম চলে আসায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে বেশ। গত শুক্রবার সরেজমিন গেলে দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে নানা তথ্য জানা যায়।
মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। পাহাড় থেকে অবিরত পানি গড়িয়ে পড়ে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘রিছাং ঝর্না’। যার অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’। কক্সবাজারের হিমছড়ি ও মাধবকুন্ডের জলপ্রপাতের পর রিছাং ঝর্নাই দেশের অন্যরকম এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য্য।
ঘুরতে আসা নাজিব মাহফুজ বলেন, রিছাং ঝর্না দেশের অন্য ঝর্নার চেয়ে ভয়ঙ্কর। একটু ব্যতিক্রম হলেই প্রাণহানির মত মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক পর্যটক পাথরের মধ্যে ওয়াটার স্লাইডিং করতে গিয়ে মাথা ফেটে আহত হয়েছেন। কাজেই পর্যটকদের সাবধানতার সাথে পথ চলতে হবে।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ির বেশকটি ঝর্নার মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় ‘রিছাং ঝর্না’। ২০০৩ সালে ভ্রমণপিপাসুদের নজরে আসা রিছাং ঝর্না সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে খাগড়াছড়ি অভিমুখে ৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর দেখা মিলবে রিছাং ঝর্নার মূল ফটক। মূল সড়ক ছেড়ে ১ কি.মি. দক্ষিণে চারদিকের পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অবস্থান রিছাং র্ঝনার। শুধু রিছাং ঝর্নাই নয় ঝর্নার অভিমুখে সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুন রোমাঞ্চকর। কাছাকাছি দুটো ঝর্নাকে ঘিরে প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এসে ভিড় জমান এখানে। আর সকলেই ঝর্নার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে একাত্ম হন প্রকৃতির সাথে।
মূল সড়ক থেকে ঝর্নার সিঁড়ি পর্যন্ত যেতে পেতে হয় নানা ভোগান্তি। অনেকে বাইকে চেপে ভাড়া দিয়ে সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত যাচ্ছেন। আর যারা হেঁটে যাচ্ছেন তাদের অনেক কষ্ট পেতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বাইক চলাচলের ফলে পর্যটকরা বিরক্তিবোধ করছেন।
চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক ফাতেমা জোহরা বলেন, রাইডারদের জন্য হেঁটে যাওয়া খুবই কষ্টকর। একটু পর পর বাইকগুলো পাশ অতিক্রম করাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ইচ্ছেমত হর্ন দেওয়ার কারণে প্রচুর শব্দদূষণ হচ্ছে। কানে সমস্যা করছে। নির্দিষ্ট কয়েকটি বাইক ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করার অনুরোধ করছি।
সরেজমিনে দেখা গেল, মূল সড়ক ছেড়ে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে লম্বা সিঁড়ি। আনুমানিক দুই শতাধিক ধাপ শেষে নিচে নামতে নামতেই কানে বেজে উঠবে প্রকৃতির শনশন শব্দ। সিঁড়িটি শেষ হতে না হতেই দেখা পেয়ে যাবেন কাক্সিক্ষত ঝর্নার।
এখানে পাশাপাশি থাকা দুটি ঝর্নার মধ্যে পর্যটকদের ঝর্নায় যাওয়ার জন্য পাকা সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। আর প্রথম ঝর্নাটি থেকে আরো প্রায় ২০০ গজ ভেতরে গেলে দেখা মিলবে দ্বিতীয় ঝর্নাটির। মোহনীয় রিছাং ঝর্নার পাশাপাশি সবুজ পাহাড় ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠির জীবনধারা আপনাকে নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।
১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে পড়া জলধারা নেমে এসেছে সমতলে। মূলত ঝর্নাটির বিশেষ এ বৈশিষ্টের কারণেই অনেকে ঢালু এই পথে প্রাকৃতিক ‘ওয়াটার স্লাইডিং’ করতে ভালোবাসেন। যদিও পাথুরে স্লাইড বলে পিছলে নামার জন্য মোটা কাপড় বা ছালার মতো কোনো সামগ্রী ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া রিছাং ঝর্নার পাদদেশে যেখান থেকে ঝর্নার পানি সমতলের উদ্দেশে যাত্রা করেছে সেখানে চাইলে সাঁতার কাটা বা গোসল করার বাড়তি সুবিধাও নেয়া যায়।
রিছাং ঝর্নাকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় ও নিরাপদ করতে সেখানে ইতোমধ্যেই প্রবেশদ্বারে গেট নির্মাণ করেছে মাটিরাঙা উপজেলা প্রশাসন। পর্যটকদের সুবিধার্থে ঝর্নার কাছাকাছি চেঞ্জরুম ও বাথরুম নির্মাণ করা হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে খাগড়াছড়ি ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিজন কুমার দাশ পূর্বদেশকে বলেন, খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়মিত টহল রয়েছে। পাশাপাশি যারা বিভিন্ন স্পটের তথ্য চান তাদের তথ্যগত সহায়তা দেয়া হয়। সাজেকসহ জেলার সব কেন্দ্রে নজরদারি থাকায় পর্যটকরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে পারেন।