দর্শনার্থীদের ভিড় তাহিরপুর শহীদ সিরাজ লেকে

138

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন শহীদ সিরাজ লেকটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে দিন দিন। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থী আসছেন এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
লেকটি সবুজ বনানী, উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও মেঘালয় পাহাড় নিয়ে আকর্ষণীয় করে তুলছে পর্যটকদের কাছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আগ্রহ বাড়ছে। এর নাম নিয়ে যদিও বিভ্রাট রয়েছে। কেউ বলছেন নিলাদ্রী লেক, কেউ বা বাংলার কাশ্মির, আবার কেউ বলছেন তাহিরপুর সীমান্ত লেক। তবে স্থানীয়রা বলছেন পাথর কোয়ারী। অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং স্থানীয় লোকজন জানেন ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত পাথর খোয়ারী হিসেবে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গত বছরের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে লেকটিকে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামকরণ করেন।
জানা যায়, লেকটি তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এখানে হানিফ সংকেত গত বছরের ১৯ নভেম্বর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং করেন। এতে শহীদ সিরাজ লেক নাম প্রচার করা হয়। এই লেকের পাশে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন বাংলার বীর সেনানীগণ। তাদের মধ্যে শহীদ সিরাজ অন্যতম। লেক সংলগ্ন তার সমাধি দেখতে আসেন অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত খোয়ারীটি ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। চুনাপাথর সংগ্রহ করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এর কার্যক্রম। পরে ১৯৬০ সালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি চালু রাখার জন্য চুনাপাথরের প্রয়োজনে ভূমি জরিপ চালিয়ে সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট এলাকায় ৩২৭ একর জায়গায় চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ। ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন করে। ১৯৯৬ সালে প্রকল্পটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এরপর গভীর কোয়ারীতে পানি জমতে জমতে একসময় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুমন দাস, নরোত্তম, ধীমান চন্দ্রসহ স্থানীয় এবং পর্যটকগণ বলেন, ‘মেঘালয় পাহাড় ঘেরা সৌন্দর্যময় স্থানটি দেখে আমরা মুগ্ধ। তবে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়ন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পর্যটকদের।’ তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ হওয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। এই লেক দেখতে অনেক পর্যটকগণ আসেন। পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানও দেখতে আসেন।’ উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। এরপর মোটরসাইকেল বা সিএনজি দিয়ে (জনপ্রতি ১শ’ টাকা) তাহিরপুর উপজেলায় অথবা লাউড়েরগড় যেতে হয়। ইচ্ছা করলে পায়ে হেঁটে লাউড়েরগড় যাওয়া যায়। সেখান থেকে হেঁটে গেলেই যাদুকাটা নদী, বারেক টিলা। এরপর ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে সীমান্ত দিয়ে ট্যাকেরঘাট যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। অন্যদিকে তাহিরপুর থেকে বর্ষায় নৌকায় জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেল দিয়ে ট্যাকেরঘাট জনপ্রতি ১শ’ টাকা।