দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর বিনোদন কেন্দ্রগুলো

60

ঈদের আমেজে নগরীর সকল বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন কানায় কানায় পূর্ণ। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে চলছে বাড়তি আমেজসহ ভিন্নতাও। ঈদুল আযহার ছুটিতে পুরো নগর যখন ফাঁকা তখন ভিন্ন চিত্রের দেখা মেলে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। পতেঙ্গা সি-বিচ, হালিশহর সি-বিচ, ফয়’স লেক সি-ওয়ার্ল্ড ও চিড়িয়াখানায় সময় কাটাচ্ছেন বিনোদনপ্রেমীরা। তবে এসব বিনোদনকেন্দ্রে আনন্দকে পূর্ণ মাত্রা এনে দিয়েছে কোমলমতি শিশুরা। এদের মাঝেই ঈদের খুশি যেন সবচেয়ে বেশি বিরাজ করছে।
গতকাল বুধবার বৃষ্টি আর রোদের দোলাচলেও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল এটি। তবে পর্যটকদের অভিযোগ, যত সুন্দর করে এটিকে নতুনত্ব দেয়া হয়েছে তা বাদামের খোসা এবং ঝালমুড়িওয়ালার কাগজের ঠোঙার কারণে মলিন দেখাচ্ছে।
কলেজছাত্রী নাজমুন নাহার মুন্নি বলেন, সি বিচকে যখন নতুন করে সাজানো হয়েছিলো তখন খুব সুন্দর ছিলো। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এটিকে নোংরা করা হয়েছে।
অপরদিকে সন্ধ্যার পরও সেখানে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় আঁধারে নানা আতঙ্কে পর্যটকের সংখ্যা কমতে দেখা যায় এবং জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়।
পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ উৎপল বড়–য়া বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে সবাই সমুদ্রের সৌন্দর্য্য আরও উপভোগ করতে পারতো। কিন্তু আমরা বেশ কয়েকবার বলার পরেও বিদ্যুতের লাইন দেয়া হয়নি। তারপরও আমরা কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পর্যটকদের সেবা দিয়ে আসছি। সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ রাখা হয়েছে সৈকতজুড়ে। কেউ যদি অভিযোগ করতে চায়, তাহলে তাদের আর থানায় আসার প্রয়োজন নেই, কন্ট্রোল রুমে রেজিস্ট্রার রাখা আছে। সেখানেই অভিযোগ করতে পারবেন।
ঈদ উপলক্ষে ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে শিশুদের জন্য কিছু ইভেন্ট এবং বড়দের জন্য রাখা হয়েছে গেম শো। পাশাপাশি রয়েছে ঈদ র‌্যাফেল ড্র। এছাড়াও ফয়’স লেকে ফ্যামিলি ট্রেন, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, সার্কাস সুইং, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই ¯øাইড, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপের মতো রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় আধুনিক রাইড। এসব রাইডে শিশুদের পাশাপাশি তরুণদেরও চড়তে দেখা গেছে।
কলেজছাত্র আলফাজ উদ্দিন বলেন, একটু ভিন্নমাত্রার রাইড ছিলো এখানে। তার পাশাপাশি আমরা ওয়াটার পার্কেও অনেক আনন্দ করেছি। ডিজে পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছি। এককথায় বলতে গেলে পুরো দিনটি খুবই ভালো কেটেছে।
ফয়’স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কের সহকারী ব্যবস্থাপক অভিজিৎ পাল বলেন, সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী ভিজে গেছে। তবুও দর্শনার্থীরা বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ফয়’স লেক আসছে। যার ফলে আজকে টিকেট বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৮০০টি। গতকাল (মঙ্গলবার) ছিল তিন হাজার ৯০০টি। ঈদ উপলক্ষে পার্কে শিশুদের পাশাপাশি বড়দের জন্য গেম শো এবং মাসব্যাপী ঈদ র‌্যাফেল ড্র আকর্ষণীয় করে তুলেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দেখা যায়, টিকেট কাটার লম্বা লাইন। ভেতরে শিশুদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও জীবজন্তুর কার্যকলাপ উপভোগ করছেন। ঘুরতে আসা মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, আকাশ পরিষ্কার দেখে সকালে চিড়িয়াখানায় আসি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি নামার ফলে কাকভেজা হয়ে গেছি। তবুও ভিন্ন ভিন্ন পশুপাখি দেখে খুব ভাল লাগছে।
চকবাজার এলাকা থেকে আসা আনিকা সৈয়দ সুবাহ বলেন, চিড়িয়াখানার দেয়ালচিত্র ও ওয়াকওয়েগুলো চোখে পড়ার মত। দেয়ালের গায়ে প্রদর্শনীগুলোর নান্দনিকতা প্রকাশ করে সবার মন ছুঁয়েছে। তবে গতবারের ঈদের চেয়ে এবার খাচায় প্রাণির সংখ্যা কম দেখা গেছে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ পূর্বদেশকে বলেন, সকালে বৃষ্টি হওয়ায় টিকেট একটু কম বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু দুপুরের পর প্রায় আট হাজার ৭০০টি টিকেট বিক্রি হয়। যা গতকাল (মঙ্গলবার) ছিলো মাত্র ছয় হাজার।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি নানান পশুপাখির সাথে পরিচয় করিয়ে দর্শনার্থীদের একটু বিনোদন দেয়ার জন্য। বৃষ্টি না হলে আগামী কয়েকদিনে দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে আশা করছি।
নগরীর আগ্রাবাদ ও কাজীর দেউড়ী শিশুপার্ক এবং বহদ্দারহাটের স্বাধীনতা কমপ্লেক্সেও উল্লেখযোগ্য দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তবে বৃষ্টি না হলে বিনোদন কেন্দ্রগুলো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিনোদন প্রেমীরা।