দন্ডবিধিতে ধর্ষণের সংজ্ঞা কেন সংশোধন হবে না, হাইকোর্টের প্রশ্ন

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

নারীদের ক্ষেত্রে যে নিপীড়নকে আইনে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, পুরুষসহ অন্যদের সঙ্গে একই ধরনের অপরাধ ঘটলে তাকেও ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচনা করতে দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা কেন সংশোধন করা হবে না, সেই প্রশ্ন রেখেছে হাই কোর্ট।
এক আইনজীবীসহ তিনজনের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রবিবার এই রুল জারি করে।
ধর্ষণ সংক্রান্ত দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় লিঙ্গ সমতা বিধান করে সংশোধন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুরের বাসিন্দা সৌমেন ভৌমিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নূহিয়া আহমেদ এবং সমাজকর্মী মাসুম বিল্লাহ হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
দÐবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে, যদি পাঁচটি ঘটনার কোনো একটি ঘটে থাকে। এক. তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, দুই. তার সম্মতি ছাড়া, তিন. হত্যা বা আহত করার ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়ে, চার. ওই পুরুষ যদি জানেন যে তিনি ওই নারীর স্বামী নন, আর ওই নারী সম্মতি দিয়েছেন কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, ওই পুরুষ তার আইনসম্মতভাবে বিয়ে করা স্বামী, পাঁচ. সম্মতি দেওয়া হোক বা না হোক, ওই নারীর বয়স যদি ১৪ বছরের কম হয়। (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বয়সের এই সীমা দেওয়া আছে ১৬ বছর)। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গম বিবেচনা করার জন্য ‘পেনিট্রেশনই’ (প্রবিষ্ট করা) যথেষ্ট হবে।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, ‘দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি, সেখানে ডেফিনিশনটা কেবল ভ্যাজাইনাল পেনিট্রেশনকে রিকগনাইজ করে। কিন্তু শব্দটা যদি কেবল পেনিট্রেশন হয়, সেক্ষেত্রে শরীরের যে কোনো জায়গায়, তা ওরালও হতে পারে, পেনিট্রেট করলেই সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা আইনে থাকা ধর্ষণের সংজ্ঞার জেন্ডার নিউট্রালাইজেশন দাবি করেছি।’
এ রিট আবেদনটি করা হয়েছিল গত বছরের ১১ জানুয়ারি। ওই সময় ছেলে শিশু এবং পুরুষ যৌন নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল জানিয়ে তাপস কান্তি বল বলেন, ‘এ ধরনের নির্যাতনকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে বিচার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ‘নারী ধর্ষণ’ এর অপরাধের পাশাপাশি অপরাধ হিসেবে ‘পুরুষ ধর্ষণ’ বিষয়টিকে যুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে।’
আবেদনে বলা হয়েছে, দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় শুধু পুরুষ দ্বারা নারীদের ধর্ষণের বিষয়ে বলা আছে। এখানে সম্মতি ছাড়া নারীদের দ্বারা নারী, নারীর দ্বারা পুরুষ, পুরুষ দ্বারা পুরুষ এবং একজন ট্রান্সজেন্ডার আরেক ট্রান্সজেন্ডারের দ্বারা যৌন নিপীড়নের মত বিষয়গুলো নেই। ফলে পুরুষের ওপর পুরুষের এ ধরনের অপরাধের অভিযোগ এলে এতদিন দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় মামলা নিত পুলিশ। খবর বিডিনিউজের
দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে’ গিয়ে কেউ পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা দশ বছরের জেল হতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে জরিমানা।
আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যু বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।’