দখল-দূষণে বিপন্ন ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়া

14

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

দূষণ-দখলে ছোট হয়ে আসছে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্ররঘোনা ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়াটির চারপাশ। ছড়ার তীর ঘেঁষে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধীক অবৈধ স্থাপনা। মধু ছড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার এ ছড়াটির পাশ প্রতিনিয়তই বেদখলে চলে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সবাই দখলের উৎসবে নেমেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার পাশাপশি ছড়াটিতে পানি নিস্কাশনে বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে এলাকাবাসীরা। যে হারে প্রভাবশালীরা দখলে নিচ্ছে আগামী ২-১ বছরের অস্তীত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বহু বছরের পুরানো এ ছড়াটির তীর যে যার মত পারছে দখলে নিচ্ছে। তবে এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দখলকারীরা বেপোরোয়া হয়ে ছড়ার উপর গড়ে তুলছে বসতঘরসহ নানা স্থাপনা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড দোভাষী বাজারের মিশন এলাকার ত্রিপুরা সুন্দরী মধু ছড়ি থেকে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার পর্যন্ত ছড়ার দু’পাশ দখলে নিয়ে নানা স্থাপনা দোকান বাসা বাড়ি অনায়াসে ঘরে তুলেছে এলাকার একাধীক ব্যাক্তি। ছড়ার দোভাষী বাজার মাছ বাজার থেকে ত্রিপুরা সুন্দীর ব্রিজ পর্যন্ত স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক নোটিশ দেওয়া হলেও দখল প্রক্রিয়া থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে ছড়া উদ্ধারে উচ্ছেদ কমিটি করেও ছড়াটি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক এ ছড়া রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। সূত্রে জানা যায়, ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়াটি চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকার মধূছড়ি থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশেছে। একসময়ে প্রবাহমান এই ছড়াটিই ছিল এতদঅঞ্চলের পানি নিস্কাষণের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু কয়েক যুগ আগে থেকেই কিছু প্রভাবশালীদের নজর পড়ে এই ছড়ার উপর। একটি দুটি করে এই ক্রমেই ছড়ার উপর গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এসব ভবনের ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে ছড়াটির অস্থিত্ব। ছড়া দিযে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে সামান্য বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছড়ার উৎপত্তি অংশে রয়েছে চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকা। ওই স্থানেও ছড়াটি দখল করে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। নিচের অংশে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের মাছ বাজার থেকে শুরু করে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত এই ছড়ার বিস্তৃর্ণ জায়গা দখল হয়ে গেছে। ছড়া দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে গড়ে ওঠেছে মার্কেট, বাসা-বাড়ি, দোকানসহ নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনার ফলে কয়েক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ছড়াটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে, প্রতিদিন ছড়াটির শেষ সিমান্তে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল প্রবেশ পথের মুখের সামনে দোভাষী বাজারের আবর্জনা ফেলার কারণে উৎকুট দুর্গন্ধে জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়া ছড়াটির মোহনা থেকে খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল এলাকা পর্যন্ত পলিথিন, আবর্জনাসহ নানা কিছু ভাসছে। ফলে ছড়াটির পানির রঙ তীব্র কালো আকার ধারণ করেছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বাধাগ্রস্ত হয় পানি প্রবাহ। তখন এলাাকাবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এমনটা অভিযোগ স্থানীয় জনসাধারণের। কথা হয় ছড়া নিয়ে আবুল হোসেন (৭০) নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সাথে। তিনি জানান, ত্রিপুরা সুন্দরী নামের এ ছড়া দিয়ে একসময় পানি প্রবাহিত হতো। চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকার নিস্কাসিত পানি এই ছড়া দিয়েই প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলীতে যেতো। কিন্তু ছড়াটি এখন সম্পূর্ণরূপে দখল হয়ে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর জনান, শুধু দোভাষী বাজার নয়, ছড়ার উৎপত্তিস্থল কাপ্তাইয়ের মধূছড়ি থেকেই এ ছড়াটির পাশ দখল হয়ে গেছে অনেক বছর আগে। এটি দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়া হলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে। ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়া দখলের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ছড়াটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য সকর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে । যে কোন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।