দক্ষিণ জেলা আ.লীগে কে হচ্ছেন মফিজের সঙ্গী?

178

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ১২ ডিসেম্বর। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মোতাবেক সম্মেলনে দুইজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যু হলে হিসাবে ওলটপালট হয়ে যায়।
এদিকে আওয়ামী লীগের দক্ষিণের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস মিলেছে। দক্ষিণে মফিজুর রহমানের সঙ্গী কে হচ্ছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়েই জম্পেশ আলোচনা।
তবে এ বিষয়ে দক্ষিণের রাজনীতিতে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত কেউ বিরাগভাজন হওয়ার শঙ্কায় সরাসরি কথা বলতে নারাজ। তবে নির্ভরযোগ্য একজন নেতা বলেন, সামনে নির্বাচন হওয়ায় মন্ত্রী-এমপি কাউকে শীর্ষপদ না দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে কেন্দ্রের। সে হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সাবেক সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মোছলেম উদ্দিন আহমদও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোতাহেরুল ইসলামকে সভাপতি করতে দলের নীতিনির্ধারকদের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন মোতাহেরুল ইসলাম। তিনি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম আবুল কালাম, আবুল কালাম চৌধুরী সভাপতি হওয়ার দৌঁড়ে আছেন। এছাড়াও কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ইচ্ছেও প্রাধান্য পাবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘কে সভাপতি হবেন সেটি নেত্রীই এককভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন। আমি বিগত কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি ছিলাম। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ছিলাম। মোছলেম ভাই দেশের বাইরে গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যখনই দায়িত্ব পেয়েছি সবগুলো ভালোভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। এখন বাকিটুকু মূল্যায়ণ করবেন নেত্রী’।
নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মফিজুর রহমানকে সভাপতি করে অন্য কাউকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে চাইছে। কিন্তু সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত মফিজুর রহমানকে সভাপতি করার পক্ষে নেই কেন্দ্র। যে কারণে মফিজকে সাধারণ সম্পাদক রেখেই সভাপতি বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি সংসদ ভবনে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। সে বৈঠকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে মোছলেম উদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মফিজুর রহমানকে সাথে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করেছিলেন। সেটি বহাল রেখে নতুন একজনকে সভাপতি করলে কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতা কেটে যাবে। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক চিঠিতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি সকল উপজেলা ও জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের কাছেও এ চিঠি এসেছে বলে জানা যায়।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ অনুসারীদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকলেও রাজনৈতিক বলয় আলাদা ছিল। কোনো কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেই দুই নেতার অনুসারীরা ভাগাভাগি করেই কমিটি নিতো। মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ অনুসারীদের মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে। দুটি পক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় সকলের আস্থাভাজন নেতায় পরিণত হয়েছেন মফিজুর রহমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মফিজুর রহমান গুরুত্ব পাবেন। কিন্তু সভাপতি কে হচ্ছেন সেটির ক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত আসবে। সভাপতি দেয়ার পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে পারে। তবে দক্ষিণের রাজনীতিতে মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর সাংগঠনিক মনোভাব ও সংগঠনে মনোনিবেশ করতে পারে এমন নেতার শূণ্যতা আছে’।