দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের সাত এমপির পদত্যাগে সরকার পতন হবে না

20

বিএনপি-জামায়াতের হাত ভেঙে দিতে হবে : মোশাররফ তারেক জিয়া সন্ত্রাসীদের গডফাদার : হানিফ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ১৭ বছর পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামের সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাচুর্য়ালি বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘সংসদ থেকে সাত সদস্য (এমপি) পদত্যাগ করলেও সরকার পতন হবে না। ৩৫০ এমপি নিয়ে সংসদ গঠন হয়েছে। তাতে জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারাও আছে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখনও তত্ত¡াবধায়ক সরকার চায়। কিন্তু তত্ত¡াবধায়ক সরকার মরে ভূত হয়ে গেছে। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার আইন বাতিল হয়েছে। পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে তত্ত¡াবধায়ক সরকার নেই। পুলিশের ওপর হামলা, জ্বালাও-পোড়াও করলে ছাড় দেওয়া হবে না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা হবে, নির্বাচনেই ফাইনাল খেলা হবে। নির্বাচন হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতিবাজ তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে খেলা হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আবারও সরকার গঠন করবে। শেখ হাসিনার মতো সৎ, ত্যাগী ও যোগ্য নেতা ’৭৫ সালের পর আর কেউ নেই। শেখ হাসিনাই মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন করেছেন।’
১০ ডিসেম্বর খেলায় আমরা জিতে গেছি মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনেই ফাইনাল খেলা হবে। নির্বাচন হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
সম্মেলনের উদ্বোধক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে অচল করার পাঁয়তারা করছে। যে হাতে তারা আক্রমণ করবে, সে হাত ভেঙ্গে দিতে হবে। ভেঙ্গে না দিলে কোনো কাজ হবে না। আগামী দিনে এমন পরিস্থিত আসতে পারে, মোকাবেলা করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে বিএনপি, জামায়াত, স্বাধীনতা বিরোধীদের চিনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। বিএনপির আমলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতি করা হয়েছে। যারা যুদ্ধ করেনি তারা খেতাব পেয়েছে। জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেননি। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই চট্টগ্রাম প্রীতিলতার চট্টগ্রাম, সূর্যসেনের চট্টগ্রাম, মহিউদ্দিন চৌধুরীর চট্টগ্রাম। আমরা কখনো আন্দোলনে পিছিয়ে ছিলাম না।’
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া হাওয়া ভবনকে খাওয়া ভবন বানিয়ে ফেলেছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে বসে বসে দুর্নীতি করেছিল। তারেক এই দেশে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। সেই সন্ত্রাসীদের গডফাদার।’
মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশ প্রমাণ করেছে বিএনপি মিথ্যাচার ও ভাওতাবাজের দল। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথেও তারা মিথ্যাচার করে। বিএনপির সৃষ্টিটাই অবৈধ। জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টে বসে এই দলটি করেছিল। আন্দোলনের খেলা শেষ। এখন নিজের দলের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে কাজ করুন।
বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগ প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘তারা (বিএনপি) তো ১০ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার কথা বলে নেতাকর্মীদের সমাবেশে এনেছিল। কিন্তু তারা পারেনি। নেতাকর্মীদের মিথ্যাচারকে পাশ কাটাতে সাত এমপি পদত্যাগ করলো। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা করতে এই পদত্যাগ করা হয়েছে। মূলত বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তাদের দলের প্রধান একাধিক মামলায় দÐিত হয়ে কারাগারে আছেন। আর তারেক জিয়া তো খুনি, দুর্নীতিবাজ। তাই সে এখন পলাতক। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সকলের প্রতি আহŸান জানান হানিফ।
প্রথম অধিবেশনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম।
এদিকে দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ¡াস-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ছয় হাজার ডেলিগেট ও ৫০০ কাউন্সিলর সম্মেলনে যোগ দেন। প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। সম্মেলনে পুনরায় মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।