দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রসার হচ্ছে পেয়ারার আবাদ

28

আসহাব আরমান

বর্তমানে বাংলাদেশে পেয়ারার বাজার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মোট উৎপাদনের ১৭ শতাংশ পেয়ারা উৎপাদিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় উৎপাদিত হচ্ছে এই পেয়ারা। পটিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী ছাড়াও বোয়ালখালী এবং লোহাগাড়া উপজেলায়ও পেয়ারার আবাদ হচ্ছে। উন্নত প্রশিক্ষণ ও কৃষি তথ্যসেবা কৃষকদের কাছে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর কারণেই পেয়ারার আবাদ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশ উপজেলায় এ বছর পেয়ারার আবাদ হয়েছে ৭৫৫ হেক্টর, বাঁশখালী উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর এবং পটিয়ায় ৮০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি পেয়ারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ২১ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন পলি জমে। এতে এখানকার মাটি উর্বর হয়। এ কারণে পেয়ারার চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত গাছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য এই পেয়ারাকে স্বাস্থ্যসম্মত বা অর্গানিক পেয়ারা বলা হয়। প্রতিবছর পেয়ারার মৌসুমের শুরুতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাগিচাহাট, রওশন হাট, বাদামতল, কাঞ্চননগর গেট ঘর এবং দোহাজারী রেলওয়ে বাজার এলাকা ও পটিয়ার খরণা, কমল মুন্সির হাট ও কেলিশহর দারোগা হাটে পেয়ারার পাইকারি বাজার বসে।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান পূর্বদেশকে জানান, পটিয়া উপজেলায় এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ২১ মেট্রিক টন। পটিয়া উপজেলায় এ বছর মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন সপ্তম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফলটির উৎপাদন ছাড়িয়েছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ কেজি। প্রতি কেজি পেয়ারার ভোক্তা ও পাইকারি বাজারে গড় দাম ৬২ টাকা বিবেচনায় নিলে এটির বাজার ছাড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। তবে পেয়ারার ৩০ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ও পিরোজপুরে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে উৎপাদিত হচ্ছে ১৭ শতাংশ পেয়ারা। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৭ হাজার ৩৪৫ একর জমিতে পেয়ারার উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৭ মেট্রিক টন। দেশে এই সময়ে পেয়ারার প্রায় ৩০ শতাংশই দুটি জেলায় উৎপাদিত হয়েছে।
এদিকে পেয়ারা ঘিরে চট্টগ্রামের পটিয়া-চন্দনাইশে বসেছে অর্গানিক হাট। বর্তমানে এ বাজারগুলোতে পাইকারি পেয়ারা বিক্রেতাদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন এসব বাজারে লাল কাপড়ে মোড়ানো হাজার হাজার কেজি পেয়ারা আসে বিক্রির জন্য। এ ছাড়া পেয়ারা বহন করে বাজারে আনা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে প্রতি মৌসুমে।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক পূর্বদেশকে জানান, চট্টগ্রামে আগে শুধুমাত্র চন্দনাইশের কাঞ্চননগর ও পটিয়ায় পেয়ারার আবাদ হতো। বর্তমানে পেয়ারার আবাদ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। বাঁশখালীতে এ বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ হয়েছে। নতুন জাতের পেয়ারার বীজ বপনের কারণে সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস পেয়ারা চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে কৃষকরা পেয়ারা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি অফিস কৃষকদের জন্য ফল চাষের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে পেয়ারা, মাল্টা ও ড্রাগন ফল চাষের উপর এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।