দক্ষিণ চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠতম এক মহান সাধক শাহসুফি আমজাদ আলী জাহাঁগিরী (ক.)

36

মোহাম্মদ আবদুর রহিম

সুফিবাদ একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হলো এই দর্শনের মর্মকথা। ‘সুফ’ অর্থ পশম আর তাসাওউফের অর্থ পশমী বস্ত্র পরিধানের অভ্যাস অতঃপর মরমী তত্তে¡ ও সাধনায় কাহারো জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাওউফ। যিনি নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সুফি নামে অভিহিত হন।’ তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বুঝায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার,তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে ‘তরিকত’ বা আল্লাহ – প্রাপ্তির পথ বলা হয়। তরিক্বত সাধনায় মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শকের প্রয়োজন হয়। সে পথ হলো ফানা ফিশ্শাইখ, ফানা ফিররাসূল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সুফি দর্শন অনুযায়ী সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সুফির অন্তরে সার্বক্ষণিক শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে। তেমনি হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.) ছিলেন জাহাঁগিরিয়া ত¦রিকার একজন অন্যতম সুফিসাধক। তিনি শাহসুফি নামে পরিচিত।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন: হযরত শাহ্সুফি আমজাদ আলী (রহ:) চন্দনাইশ থানার অন্তর্গত কাঞ্চননগর (পশ্চিম এলাহাবাদ) গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১২৯৬ হিজরী মোতাবেক ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রোজ শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। হযরত শাহ্সুফি আমজাদ আলী (রহ:) ছিলেন মাদারজাত অলি। তাই ছোট বেলা থেকেই তার থেকে বিস্ময়কর অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়। যেমন: একদা তিনি তার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে যান। তার নানা মেহেরুজ্জামান ওরফে মুয়াজ্জাম ফকির ছিলেন খেলাফত প্রাপ্ত একজন আল্লাহর অলি। তার পিতা সৈয়্যদ নাজির আলী শাহ তাঁকে নিয়ে মির্জাখীল দরবার শরীফে উপস্থিত হলে গদিনশীন হযরত শাহ্ জাঁহাগীর ফখরুল আরেফীন আবদুল হাই (রহ:) বালক শাহ্সুফির সব অবস্থা জ্ঞাত হয়ে সৈয়্যদ নাজির আলী শাহকে বললেন আপনার এই বালকটি আমাকে দিয়ে দিন। পিতা নাজির আলী শাহ আনন্দ চিত্তে ও খুশি মনে আদরের সন্তান শাহসুফি আমজাদ আলীকে ফখরুল আরেফিন হযরত আবদুল হাই জাহাঁগির এর হাতে অর্পণ করেন। তিনি তৎকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরামের মধ্যে জাহেরী ও বাতেনী ইলমের ধারক ও বাহক ছিলেন। হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী স্বীয় পীর ও মুর্শিদ আবদুল হাই জাহাঁগির এর নিকট প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য আবদুল হাই জাহাঁগিরের নির্দেশে সীতাকুন্ড আলিয়া মাদ্রাসায় গমন করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের রামপুর আলীয়া মাদ্রাসা ও পৃথিবী খ্যাত মিশর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে স্বীয় মুর্শিদের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন।
হযরত শাহসুফি (ক.)’র ইবাদত ও রেয়াজত: ইবাদত বন্দেগীর দিক থেকে হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.)ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। তাঁর কষ্টকর ইবাদতের ঘটনাগুলো আজো কিংবদন্তীর মতো শুনা যায় সর্বত্র। পাহাড়ে বা যেখানে লোকজন বসবাস করতে ভয় পায় সেসব জায়গাকে তিনি ইবাদতের ক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করে নিয়েছিলেন। আজকের শাহসুফি’র দীঘি ও তার চারপাশ ঊনিশ শতকের শেষদিকে এবং বিশ শতকের শুরুর দিকে ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ও জীন, ভুত, প্রেতের অবাধ আবাসভূমি। আর হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.) হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি নির্ভয়ে এখানে একাকি চলা ফেরা করেছেন ও দিন রাত এবাদত বন্দেগী করে এই জায়গাটিকে বাসযোগ্য করেছেন। তিনি কঠোর রেয়াজতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনির পীর ভাইগণ বর্ণনা করেছেন। ‘সুফিসাহেব প্রায় রাতেই গাছে উঠে উপরের দিকে পা আর নীচের দিকে মাথা দিয়ে ইবাদতে মশগুল থাকতেন।” পাহাড়েও তিনি একই ভাবে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। একসময় বিকেলের পর এই এলাকাটির (শাহসুফি দীঘির পার্শ্বস্থ এলাকা) পাশ দিয়ে কেউ চলাফেরা করার সাহস করত না। আর আজ সেই এলাকাটি যার কল্যাণে প্রায় নাগরিক শোভায় শোভিত হতে চলেছে তিনি হলেন হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আজিজ।
বায়াত ও খেলাফত: শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.) পীরের আদেশ ব্যতীত কখনো কোন কাজ সম্পাদন করেননি। তিনি সর্বদা মুর্শিদের কাছাকাছি থাকতেন। তিনি স্বীয় মুর্শিদের নির্দেশে সাতকানিয়ার অভিজাত বংশের কন্যা সৈয়্যদা সুফিয়া খাতুনকে বিবাহ করেন। তার ঔরশে ছয় পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীতে হযরত ফখরুল আরেফিন আবদুল হাই জাহাঁগির (র.) হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.) কে জাহেরী ও বাতেনি জ্ঞানে আলোকিত করে খুব অল্প বয়সে খেলাফত প্রদান করেন। তিনি শাহসুফিকে এতই ¯েœহ ও ভালোবাসতেন যে, তিনি মাঝে মাঝে বলতেন শঙ্খ নদীর উত্তর পাড়ের বাসিন্দারা যেন সুফি আমজাদ আলীর কাছে মুরিদ হয়। আর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দারা যেন তাঁর (হযরত শাহ জাহাঁগির ফখরুল আরেফিন আবদুল হাই) এর কাছে মুরিদ হয়। হযরত ফখরুল আরেফীন আবদুল হাই জাহাঁগিরের ওফাতের পর তিনি মির্জাখীল দরবার শরীফে (স্বীয় পীরের দরবারে) ১৩৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯ বছর সিলসিলায়ে আলিয়া জাহাঁগিরিয়া’’ এর যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বেলায়তের মকামে এমন এক বিরল আল্লাহর অলি ছিলেন যিনি স্বীয় পীরের দরবারে অবস্থান করে নিজ পীর ভাইদেরকে খেলাফত দান করেন। এছাড়াও তিনি আরো অসংখ্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে খেলাফত প্রদান করে তাদেরকে ধন্য করেছেন।
আধ্যাত্মিক শক্তির কিছু দৃষ্টান্ত: আনোয়ারা থানাধীন ধরাই’র মা’র মসজিদ নামক একটি মসজিদে জিনের উৎপাতের কারণে কেউ ফজর এবং এশার নামাজ সময় মতো আদায় করতে পারত না। হযরত শাহসুফি মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী (কঃ) একদিন সেই মসজিদে উপস্থিত হয়ে আসরের নামাজ আদায় করলেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করলেন। তখন উপস্থিত মুসল্লীগণ জানালেন এখানে রাতের বেলায় জীনের উৎপাত বেড়ে যায়। সেখানে শাহসুফি গমনপূর্বক ঐ মসজিদে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, জিন-ভূত তাড়িয়ে এই মসজিদ ইবাদতের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে।
তায়াজ্জুহর (রহস্যপূর্ণ আওয়াজ) শব্দ: চন্দনাইশ থানার সাতবাড়ীয়া নিবাসী মাওলালা সৈয়দ আহমদ ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন। ফতওয়া ফরায়েজে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। এছাড়া তিনি মির্জাখিল দরবার শরীফের মেজ সাহেবজাদা, ছোট সাহেবজাদা প্রমুখের গৃহ শিক্ষক ছিলেন। তাঁর পীর হযরত ফখরুল আরেফিন আব্দুল হাই জাহাঁগিরির ওফাত শরীফের পর এই আলেমকূল শিরমনি নিয়মিত শাহসুফি কেবলার নিকট যাওয়া আসা করতেন। এরকম যাওয়া আসার সময় একদিন তিনি শাহসুফি আমজাদ আলী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আজিজকে আরজ করলেন- হুজুর, আমাকে খেলাফত প্রদান করলে অনেক লোককে হিদায়েতের পথে আনতে পারতাম। উত্তরে শাহসুফি কেবলা বললেন, এটাতো আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। উপযুক্ত হলেই পাওয়া যায়। কেউ ইচ্ছা করলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম ব্যতীত কাউকে খেলাফত দিয়ে দিতে পারে না।
অন্যান্য মনীষীদের দৃষ্টিতে শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.): হযরত শাহ জাহাঁগির শেখুল আরেফিন মুখলেছুর রহমান (র.) কর্তৃক শাহসুফি হযরত আমজাদ আলী (র.) এর শুভাগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী- ঊনবিংশ শতাব্দীর কোন এক সময়ে হযরত শেখুল আরেফিন মাওলানা মোখলেছুর রহমান শাহ্ জাহাঁগীর (র.) তরিক্বতের দায়িত্ব পালনার্থে পটিয়া-চন্দনাইশ এলাকায় সফর করতে এলে জন কয়েক মুরিদকে নিয়ে আরাকান সড়ক দিয়ে যাতায়াতের পথে মোঘল আমলে খননকৃত দীঘির দক্ষিণ পাড়ে (বর্তমান শাহসুফির দীঘি) হঠাৎ তিনি পালকী থেকে নেমে জঙ্গলাকীর্ণ একটা স্থানে উচ্চস্বরে আজান দেন এবং দোয়া করেন। সফরসঙ্গীরা বিস্মিত হয়ে তাঁর কাছে এর হেতু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে একটা সুগন্ধ অনুভব করছি’। ভবিষ্যতের কোন একটা সময়ে এই স্থানে একজন মহান অলি আল্লাহর আগমন ঘটবে। আমি এর জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। এই ঘটনার বেশ কয়েক বছর পরেই ঐ স্থানে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (র.)।
আল্লামা গাজী শেরে বাংলা আযীযুল হক আল কাদেরী (র.) ‘দিওয়ান-ই আযীয’-এ হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (র.) সম্পর্কে ফার্সি ভাষায় মানকাবাত রচনা করে ভক্তি ও সম্মানের সাথে ভূঁয়শী প্রশংসা করেন।
হযরত ছৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি (র.)’র দৃষ্টিতে শাহসুফি আমজাদ আলী (ক.)’র বেলায়েত: হযরত শাহ্্সুফি কেবলার এক মুরিদ মুহাম্মদ ছিদ্দিক আহমদ শরীফ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১৪ মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ্জ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মামা) সাহেব। শাহসুফির প্রথম জামাতা রেঙ্গুনে ব্যবসা করতেন। আর হজরত সৈয়দ আহমদ সিরিকোটি (র.) নিকট যাওয়া আসা করতেন। একদিন আসরের নামাজের পর কয়েক জন লোক হুজুর এর সামনে বায়াত গ্রহণ এর জন্য গেলেন। চৌধুরী সাহেবও মুরিদ হওয়ার জন্য তাদের সাথে বসে পড়লেন। সিরিকোটি হুজুর চৌধুরী সাহেবকে কাছে ডাকলেন এবং বললেন আপনার বায়াত লাগবেনা। কারণ আপনার পীর ও মুর্শীদ আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা চালিয়ে যান।
কসিদায়ে শাহ নেয়ামত আবিষ্কার: ছাত্রজীবনে হযরত শাহসুফি মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী (ক.) রামপুরে (ভারত) নবাবের কুতুবখানায় অধ্যয়নকালে ওয়ালীয়ে কাশমির হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (র.) এর অমূল্য সৃষ্টি ভবিষ্যৎ বাণী সংবলিত কসিদার মূলকপি খুঁজে পান। উল্লেখ্য যে, দশম বা একাদশ শতাব্দির দিকে কাশমিরের বিশিষ্ট বুজর্গ হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (র.) কাব্যাকারে কিছু মূল্যবান ভবিষ্যৎ বাণী লিখে রেখে যান। ইংরেজ আমলে লর্ড ডালহৌসি এই কসিদা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলে ভারতীয় মুসলমানদের এই মূল্যবান সম্পদ প্রায় হারিয়ে যায়। এমতাবস্থায় তিনি ঐ কসিদা খুঁজে পেয়ে নবাবের অনুমতিক্রমে তা সাথে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এই কসিদা স্বীয় পীর মুর্শিদ হযরত ফখরুল আরেফীন আব্দুল হাই জাহাঁগিরি (ক.) কিবলার সামনে পেশ করেন। হযরত কিবলা এই কসিদা শায়ের কাজী ফয়জুর রহমান সাহেবকে দিয়ে বঙ্গানুবাদ করে প্রচার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এভাবে এই কসিদা লোকচক্ষুর আড়াল থেকে আবার জনসম্মুখে উপস্থাপিত হয়।
দূর সফরে থেকেও মুর্শিদের অন্তিম সংবাদ অবগত হয়েছিলেন: ১৯২১ ইং সাল মোতাবেক ১৩৩৯ হিজরীর জিলহজ্জ মাসে হযরত শাহসুফি মাওলানা মুহাম্মদ আমজাদ আলী বরিশাল জেলায় সফররত ছিলেন। শ্রীরামপুর খানেকা শরীফে অবস্থান কালীন সময় হঠাৎ একদিন সফর অসমাপ্ত অবস্থায় তিনি চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। আয়োজন শুরু করলেন চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার। এই অবস্থা দেখে জনাব আজিজুর রহমান ঢালী এবং অন্যান্য ভক্তবৃন্দ ভাবলেন তাদের নিশ্চয় কোনো বেয়াদবী হয়েছে। তাই সবাই মিলে হযরত শাহসুফি কেবলার নিকট অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং সফর বাতিল না করার জন্য অনুরোধ করলেন। এমন সময় হযরত শাহসুফি কেবলা জনাব আজিজুর রহমান ঢালীকে বললেন, ‘আজ যদি আপনি আমাকে বাঁধা দেন তাহলে সিলসিলার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে।’ একথা বলে তিনি উপস্থিত সকলকে শান্ত করে চট্টগ্রাম ফিরে গেলেন। চট্টগ্রাম এসে তিনি সরাসরি নিজ বাড়িতে না গিয়ে পীর মুর্শিদের দরবার মির্জাখিল শরীফে চলে গেলেন। সেখানে পৌঁছার পর হযরত ফখরুল আরেখিন আব্দুল হাই জাহাঁগিরি কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আজিজ শাহসুফি আমজাদ আলীকে ডেকে হযরত কেবলার অবর্তমানে সিলসিলার সাজ্জাদানশীন হিসেবে তরিকতের পরিচালনার ভার অর্পণ করলেন। এরপর জিলহজ্জ মাসের ১৭ তারিখ হযরত ফখরুল আরেফিন আব্দুল হাই জাহাঁগিরি কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহুল আজিজ মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে মিলনের উদ্দেশ্যে এই ক্ষণস্থায়ী জগৎ ত্যাগ করেন। এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ তথা বুজর্গগণ অনেক দূরে থেকেও আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় অনাগত সময়ের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন এবং সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য ছুটে আসতে পারেন।
ওফাত: হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী (রহ.) ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৫৮ হিজরির ৫ই রমজান মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান (ওফাত গ্রহণ করেন)। সুফি দার্শনিক হযরত আমজাদ আলী (রহ.)’র ৮৭তম ওফাত বার্ষিকীতে বিন¤্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি আমার পিতামাতার মহান মুর্শিদ কেবলাকে। মহান আল্লাহর তাঁর অনুরাগী হয়ে সারাটি জীবন সৎ ও সুন্দরভাবে চলার তৌফিক দান করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও হেড অব মার্কেটিং, চট্টগ্রাম ডিভিশন, ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড