দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তিন চুক্তি সই

117

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারকসহ তিনটি দলিলে সই করা হয়েছে। রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফররত কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োনের বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনটি দলিলে সই করে দুই দেশ।
সই করা দলিলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের মধ্যে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি বিনিময়, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সঙ্গে কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোরিয়া ন্যাশনাল ডিপ্লোমেটিক একাডেমির মধ্যে সমঝোতা এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমন্টে প্রমোশন এজেন্সির মধ্যে সমঝোতা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি রোববার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে টাইগার গেইটে তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রথমে একান্ত বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী, তারপর হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
প্রেস সচিব বলেন, টানা তিনবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন লি। ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোথ থাকার কথা তুলে ধরেন।
“জ্বালানি, তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে তারা সহযোগিতা করতে চায়। পরমাণু বিদ্যুতে তারা আগ্রহী।”
বৈঠকে শেখ হাসিনা দুই দেশের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে তিনি কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রেস সচিব বলেন, “তারা এটা (শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা) বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।”
বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয় এবং দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগও আলোচনায় এসেছে।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
“মানবিক এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের এবং দ্বিপক্ষীয় চাপ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন,” বলেন তিনি।
প্রেস সচিব বলেন, “রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের জন্য যা যা করা সম্ভব তাই করবে।”
কোরিয়া তার বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) থেকে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন বরাদ্দ রেখেছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের এক হাজার ছাত্র কোরিয়াতে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে অনেকে বৃত্তি পায়।
এটা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার প্রথম ঢাকায় আসেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন, সঙ্গে এনেছেন কোরিয়ার ৬৮ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল।
রোববার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তারপর ঢাকা ইপিজেডে ইয়ংওয়ানহাইটেক স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড পরিদর্শন করেন তিনি। পরে ঢাকার মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভানসড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিদর্শন করেন।
লি তার সফরে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাতে নৈশভোজের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ধানমÐিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শনের পর ঢাকা ছাড়বেন লি। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯৭৩ সালে। এরপর ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় দূতাবাস চালু করে তারা।
পরে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে এসে গার্মেন্ট কারখানা গড়ে তোলেন, যার অনেকগুলোই এখনও সচল রয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে
সহায়তার আশ্বাস সিউলের

দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইওন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা করবো। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতা চাইলে জবাবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনায় প্রধানত ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চান। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করবো, রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা দরকার। তিনি বলেন, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ভূমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশাধিকার দিলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউএনজিএ’তে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোরীয় প্রজাতন্ত্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে আমরা আপনাকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোনও ব্যতিক্রম ছাড়া সব বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া ওভেন গার্মেন্টস, ওষুধ, নিটওয়্যার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফ্রোজেন ফুড ও সিরামিক সামগ্রী আমদানি করতে পারে।
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইওন বিবেচনা করবেন বলে জানান। খবর বাসস’র