থানচিতে ঝিরি-ঝর্না থেকে অবাধে পাথর আহরণ

10

বান্দরবানের থানচিতে বিভিন্ন খাল ও ঝিরি-ঝর্না থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে পানি প্রবাহের উৎস বন্ধ হয়ে দুর্গম এলাকায় খাবার পানির সংকট তৈরি হবে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
জানা গেছে, স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে। এরপর উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করার নামে এসব পাথর মেশিনে ভেঙে কংক্রিট করে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।
এদিকে কতিপয় পাথর ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট অবৈধভাবে থানচির বিভিন্ন স্থান থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন করছে। বিশেষ করে থানচির বলিপাড়া ইউনিয়নের অনিল চাকমা পাড়া, দাকছৈ পাড়া ঝিরি, হাইলমারা পাড়া ঝিরি, শিলা ঝিরি, কনাজিও পাড়া ঝিরি, মগকক্রী ঝিরি, বলিপাড়া দাকছৈ পাড়া, শিলাঝিরি, মনরোয়া পাড়া, হৈকো খুমী পাড়া, পর্দা ঝিরির হাবরু হেডম্যান পাড়া, বোর্ডিং পাড়া, চমি পাড়া, লাকপাইক্ষ্যং পাড়ার খাবার পানির উৎস থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
এছাড়া পর্দাঝিরির কাইতং পাড়া, কুংলা পাড়া সিংত্লাংপি পাড়া, রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চয়ক্ষ্যং ঝিরি, সালোকক্যা ঝিরি, থাংদয় পাড়া ঝিরি, থানচি সদর ইউনিয়নের সেরকর পাড়া ঝিরি, (তিন্দু ইউনিয়ন) চয়ক্ষ্যং ঝিরি থেকেও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। থানচির স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে। অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে ওইসব ঝিরি-ঝর্না ও খাল পাথরশূন্য হয়ে পড়ছে। এছাড়া পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা বৈধ কাগজপত্র নেই।
পাথর উত্তোলনকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, পাথর উত্তোলনে সরকারি বৈধ কাগজপত্র নেই। আমাদের পাথর ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি আছে, সমিতির মাধ্যমে পাথর উত্তোলন করি। তবে লকডাউনের কারণে পাথরগুলো কোথাও সরববরাহ করা যাচ্ছে না। লকডাউনের পর দেখা যাবে, কি করা যায়।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা বলেন, বর্তমান সরকার বান্দরবানে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে স্থানীয় পাথর ও বালু দিয়ে কাজ করার নিয়ম না থাকলেও উন্নয়নের দোয়াই দিয়ে থানচির বিভিন্ন ঝিরি-ঝর্না থেকে যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে দুর্গম এলাকার মানুষগুলো পানি পানি করে মারা যাবে। কারণ পাথর উত্তোলনে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদার বলেন, পাথর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এটি জনজীবনে খুবই প্রয়োজনীয়। কেউ যদি অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও পরিবহন করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।