থমকে আছে আনোয়ারার ‘চায়না ইপিজেড

142

এম এ হোসাইন

আনোয়ারায় বাস্তবায়নাধীন দেশের অন্যতম বৃহৎ যৌথ মালিকানাধীন চায়না ইকোনমিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা ছিল। তাই একবছর আগেই হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়। প্রকল্পের অভ্যন্তরে রাস্তা তৈরি, প্রকল্প এলাকার পাহাড়ি টিলা সমান করা, অফিস ভবন নির্মাণ এবং কিছু অংশে দেওয়া হয় সীমানা দেয়াল। তবে প্রকল্প উদ্বোধন করতে আসেননি প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের জটিলতায় কাজ আর শুরু হয়নি। অন্যদিকে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে এখনো সায় মেলেনি চায়না সরকারের। দোটানায় পড়ে দুই লক্ষ মানুষের সম্ভাব্য কর্মসংস্থানের এ শিল্প জোনটি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।
২০১৪ সালে বেইজিং সফরকালে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে এই জোনের প্রস্তাব রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে চীনের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি ভাবনা চিন্তা করে অনুমোদন দেয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই করার সময় আনোয়ারা চায়না ইকোনমিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চীন সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ করে। ২০১৭ সালের ১৬ জুন ইকোনমিক জোন স্থাপনে বেজা ও চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি হয়। এরপর চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করে। তবে প্রকল্প এলাকায় একটি অফিস ভবন, সামান্য অংশে সীমানা দেওয়াল এবং রাস্তা নির্মাণ ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি নেই প্রকল্পের।
বেজার জেনারেল ম্যানেজার (ইনভেস্টমেন্ট প্রেমোশন) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আনোয়ারা চায়না ইকোনমিক জোন প্রকল্পে ডেভেলপার হিসাবে চায়না সরকার চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়। এখন প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ অবস্থায় আছে। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের কথা উঠেছিল। ডেভেলপার পরিবর্তন করতে চায়না সরকারের অনুমতি লাগবে। কিন্তু এখনো চায়না সরকারের কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি। চায়না হারবাং থাকবে নাকি নতুন ডেভেলপার নিয়োগ দেয়া হবে সেটা এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
তবে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে কি ধরনের জটিলতা রয়েছে, সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একই দিনে টানেলের নির্মাণ চুক্তি ও চায়না ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন হয়। অথচ টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও ইকোনমিক জোনের কাজ এখনো শুরুর পর্যায়েই রয়েছে। ২০১৯ সালের পর থেকে চায়না ইকোনমিক জোন এলাকায় কোনো কাজই করা হয়নি। ডেভেলপার হিসাবে চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সাথে জটিলতার কারণে চূড়ান্ত চুক্তি সই করেনি সরকার। যার কারণে প্রাথমিক কাজ শুরু করলেও চায়না হারবাং এরপর আর এগোয়নি। অন্যদিকে কাজের অগ্রগতি না থাকায় সরকারও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে চায়না সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে হতে যাওয়া এ যৌথ প্রকল্পে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকারের ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকার কথা ছিল প্রাথমিক চুক্তিতে। তবে চায়না হারবাংয়ের সাথে কি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইকোনমিক জোনের চায়না হারবাং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিনয় বাড়ৈ বলেন, কিছু জটিলতার কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে কাজ মোটামুটি বন্ধ অবস্থায় আছে। এখন শুনছি আবার কাজ শুরু হবে। আমরা প্রায় ২শ একর ভূমি উন্নয়ন করেছি। রাস্তা ও সীমানা দেওয়াল দিয়েছি। জটিলতাগুলোর সমাধান হলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।
চায়না ও বাংলাদেশ সরকারের (জি টু জি) যৌথ মালিকানা ভিত্তিতে ৭৮৩ একর জমিতে চায়না ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এ জোনে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য আছে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। এরই মধ্যে নির্মিত হয়েছে সুরম্য প্রকল্প কার্যালয়। আনোয়ারার পিএবি প্রধান সড়ক কালাবিবি দীঘি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত এক কিলোমাটর দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের এবং অপরটি বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চারলেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা দেয়াল। সমান করা হয়েছে প্রকল্প এলাকার ২শ একর পাহাড়ি টিলা। তাছাড়া প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ভূমিও চিহ্নিত করা আছে।
এ ইকোনমিক জোনে দেশের বিকাশমান ও রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, আইটি পণ্য, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্প গড়ে উঠবে। এতে স্থাপন করা হবে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা। ভৌগোলিকভাবে শিল্প জোনটি ইতিবাচক স্থানে রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ শিল্পজোনের গুরুত্ব বাড়ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে কোরিয়ান ইপিজেড ও কাফকো রয়েছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে এর দূরত্ব হবে মাত্র তিন কিলোমিটার।