ত্রিমুখি সমস্যা সামলাতে প্রস্তুতি ওয়াসার

27

এম এ হোসাইন

গরমের শুরুতেই বেড়েছে পানির চাহিদা। একই সময়ে বিরাজ করছে লবণাক্ততা সমস্যা। এতে কমেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন। এই দুই সমস্যায় যখন কাবু অবস্থা, সেই সময়ে শুরু হলো পবিত্র রমজান মাস। এতে ত্রিমুখি সমস্যায় পড়েছে ওয়াসা। এ অবস্থায় রেশনিং পদ্ধতিকে একমাত্র নিরামক হিসাবে নিয়েছে ওয়াসা। রেশনিংয়ে প্রতিটি এলাকায় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি।
লবণাক্ততা সমস্যায় উৎপাদন ঘাটতিতে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় চারটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানির মিশ্রণের মাধ্যমে লবণাক্ততার পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।
একই সাথে গভীর নলকূপের পানির মিশ্রণের মাধ্যমে পানি পানযোগ্য রাখার চেষ্টা আছে। পবিত্র রমজান মাসে যেকোনো মূল্যে সবার কাছে পানি পৌঁছানের প্রচেষ্টা নিয়ে মাঠে আছে ওয়াসার কর্মীরা। এলাকাভিত্তিক পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। এমনকি ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাঠে গিয়ে তদারকি করছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, লবণাক্ততার সমস্যা প্রাকৃতিক সমস্যা, বৃষ্টি না হলে এই সংকট কাটবে না। রমজানে সবাই যেন পানি পায়, সেজন্য প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেখানে পানি বাড়ানো দরকার, সেটা তারা করবে। অভিযোগ থাকলে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা এলাকায় যেখানে পানি না পাওয়ার সমস্যা ছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে। পতেঙ্গার আকমল আলী রোডের শেষের দিকে হালকা সমস্যা থেকে গেছে। বাকিগুলো সমাধান হয়েছে। এভাবে প্রতিটি এলাকায় তদারকি বাড়ানো হয়েছে। কমবেশি পানি সবাই পাবে। পবিত্র রমজান মাসে নগরীতে পানির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ওয়াসার পানির উৎস হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় গুণ। ফলে ওয়াসার পানির দৈনিক উৎপাদন কমেছে ১৩ কোটি লিটার পর্যন্ত। উৎপাদন কম হওয়ায় নগরীতে রেশনিং করে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ওয়াসা বর্তমানে চারটি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন ৩৭ কোটি লিটার থেকে ৪৮ কোটি লিটারের মধ্যে উঠানামা করছে। অন্যদিকে প্রতি লিটারে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা ৬০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত সহনীয়। কিন্তু নদীতে পানির লবণাক্ততা মিলছে ২১শ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। ওয়াসা সে পানিকে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বনিম্ন লবণাক্ততায় সরবরাহ করছে। এলাকাভেদে সরবরাহ করা ওয়াসার পানিতে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে।যা সহনীয় মাত্রার মধ্যে রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লবণাক্ততা সমস্যা কাটবে না। আমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়ের আগে ও পরে লবণাক্ততার সমস্যা বেশি হয়। এখন সংকট কিছুটা কেটেছে। বৃষ্টি হলে আশা করি সমস্যা কেটে যাবে।
তিনি বলেন, চলতি মাসে সর্বনিম্ন উৎপাদন হয়েছিল ৩৭ কোটি লিটার। সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ৪৯ কোটি লিটার। এর মধ্যে আমাদের উৎপাদন উঠানামা করছে। রমজানে যাতে সবাই পানি পায়, সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা এলাকাভিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। তাৎক্ষণিক পানির জন্য ভাউচার গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে নগরীর আগ্রাবাদ, কদমতলী, বাদামতলী, কর্নেল হার্ট, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। লাগাতার পানি না পাওয়ার অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার রাতে এসব এলাকায় তদারকি শুরু করে ওয়াসা। এর মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় পানি সরবরাহ করতে সমর্থ হয় সংস্থাটি।
কদমতলী এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, টানা ১৭ দিন ধরে আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি পাচ্ছিলাম না। সোমবার রাতে ওয়াসা পানি দিয়েছে। এতে এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে পানি চাপ খুবই কম। চাপ না বাড়ালে সবাই পানি পাবে না।