ত্যাগ চাই মসিয়া কান্দন চাহিনা ১০ মহরমের চেতনায় উজ্জীবিত হোক সমগ্র মুসলিম সমাজ

31

আজ ১০ মহরম। বিশ্ব মুসলিমের জন্য আজকের দিবসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে ১০ মহরম নানা কারণে গুরুত্বের দাবিদার। বিশেষ করে ১০ মহরম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। প্রিয়নবীর দু’ই নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন আপন চোখের মণির মতো তাঁর প্রিয় পাত্র ছিলেন। প্রিয়নবীর পত্নী হযরত ফাতেমার (রা.) প্রিয় সন্তান, ইসলামের ৪র্থ খলিফা হযরত আলীর (রা.) প্রিয় পুত্র এবং খুবই আদর্শিক ব্যক্তি ছিলেন। বিশ্বনবী, হযরত আলী ও ফাতিমার আদর্শে বড় হওয়া ইমাম হোসেন সত্যের পথে ন্যায়ের পথে ইসলামের মৌলিক বিধিবিধানের পথে জীবনযাপন করেছেন। জালিম, শাসককে মেনে না নেয়ার অপরাধে তাঁকে তাঁর অনুসারি এবং পরিবারের সদস্যসহ শহীদ হতে হয় কারবালার ময়দানে। হযরত মোয়াবিয়ার পুত্র চরিত্রহীন ও জালিম শাসক ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার না করার কারণে এয়াজিদ বাহিনী হযরত হোসেনকে অমানবিক পন্থায় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এর পর থেকে ইয়াওমে আশুরা মুসলিম জাহানে বিশেষ ভাবে পালিত হয়।
আজ সেই পবিত্র আশুরা। সুসজ্জিত ইয়াজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে প্রিয় নবীর দৌহিত্র লিপ্ত হতে চাননি। কিন্তু ইয়াজিদ বাহিনী কারবালার প্রান্তরে ফুরাত নদীর তীরে অবরোধ করে ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকার কিংবা রায়েত গ্রহণে বাধ্য করতে চেয়েছিল। ইমাম হোসেন (রা.) শেষ পর্যন্ত অন্যায় আবদারের কাছে মাথানত করেনি। সে কারণে পরিবার বর্গ এবং তাঁর অনুসারিসহ তাঁকে কারবালার ময়দানে শহীদ হতে হয়েছে। ইয়াজিদের রাজ শক্তির কাছে জীবন উৎসর্গ করলেও তিনি অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার না করে বিশ্ব মুসলিমকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অচল-অটল থাকার যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা অনুসরণ করা সকল মুসলিমের উচিত।
কারবালা ও ১০ মহরমের মহান চেতনা ধারণ করে মুসলমানেরা ১০ মহরমে আহলে বাইতের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে। গোস্ত-রুটি, তাজিয়া বানিয়ে নাচনকুদন, ১০ মহরমের মৌলিক চেতনা নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং বিশ্বনবীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ইসলামের সঠিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হওয়াই মূলত ১০ মহরের মৌলিক চেতনা। যারা মহানবীকে ভালোবাসেন, তাঁর আদর্শ ভালোবাসেন, তার পরিবার পরিজনের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেন তারা হাশর ময়দানে মহানবীর সুপারিশ লাভ করবেন। তবে এ ক্ষেত্রে যেসব অপ্রয়োজনীয় অধিক্য কোন কোন মুসলমান করে থাকে তা বর্জন করে ইমাম হোসেনের আদর্শকে জীবনে লালন করে কারবালার শহীদদের জন্য নাজাত কামনা করাই বিশ্ব মুসলিমের কর্তব্য।
১০ মহরম মহানবীর দৌহিত্রের শহীদ হওয়ার বিষয়টা স্মরণ করে নিজের জীবনকে ইমাম হোসেনের আদর্শে গড়ে তোলার মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার মধ্যে সওয়াব ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই আমরা ১০ মহরমের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে জীবনে অন্যায়, অবিচার, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঈমানী দায়িত্ব পালন করলেই ১০ মহরম স্মরণ করলে তা আমাদের নাজাতের উসিলা হয়ে থাকবে। আল্লাহ সকল মুসলমানকে এসত্য বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।