তোহার আনন্দ

61

তোহা র ভীষণ মন খারাপ। গাল ফুলিয়ে বসে আছে তো আছে। মা ডাকছে বাবা ডাকছে দাদু ও ডাকলো। তবুও নড়ার নামগন্ধ নেই। সোফায় হেলান দিয়ে বসে মনযোগ সহকারে কার্টুন দেখছে। আবার মন খারাপের ভিতর ও মাঝে মাঝে খিলখিল করে হেসে উঠছে। কার্টুন দেখে দেখে। বাবা ডাকলেই আবার গম্ভীর মুখ করে বসে থাকে। যেন একটু আগে ও হাসেনি তোহা। বাবা আড় চোখে দেখে দেখে হাসে।রুহানিকে ডেকে দেখায় কায়সার। ছেলেটা তাদের নয়নমণি।
যা করে তাই ভালো লাগে কায়সার রুহানির। সব সন্তানই মনে হয় এমন। তাদের বাবা মা’র কাছে। কায়সারকে এ বয়সে ও মা কেমন আগলে রাখে। ছেলে কি খেলো না খেলো এসব নিজে দেখভাল করে। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেই ফোনের পর ফোন দেয়। তেমন ছোট ভাই আহনাফ এর বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়না। মা‘র কাছে সন্তান কি তা মা’কে দেখলেই বুঝতে পারে তারা দু’ভাই। তোহা আসার পর থেকে কায়সার আরও ভালো ভালোভাবে বুঝলো ব্যাপারটা। বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কায়সার অজান্তেই।
তোহা সাহেবের এতো রাগের কারণ কি জানতে পারি?
দাদু কাছ ঘেঁষে বসে জিজ্ঞেস করলো।
খানিক চুপচাপ থাকার পর বলতে শুরু করলো কাহিনী।
বাবা বললো, -এবার নাকি হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কিনবে না। বাসায় বসে বসে কিনে ফেলবে।
ও তাই। এতেই তোমার মন খারাপ?
হম দাদু খুব মন খারাপ।
বাবা কাকে বললো এ কথা।
ছোট চাচ্চুর সাথে ফোনে বলতে আমি শুনে ফেলেছি।
এটা বলেই চোখ টিপে টিপে কান্না করতে লাগলো তোহা।
দাদুর ও মন খারাপ হলো একটু। বেচারা তোহা। এ সময়টার জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। কোরবানির হাটে যায় মহানন্দে বাবা চাচ্চু’র সাথে। আর গরু কিনে আনে হৈ হৈ উৎসবে।
দাদু আরো কাছে টানলো তোহাকে। তারপর আস্তে ধীরে বললো, এবার তো গরু কিনতে কেউ হাটে যাবেনা তোহা সোনা।
তোহা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো – কেন?
কারণ এ সময় পশুর হাট বসা হাটে যাওয়া একদম নিরাপদ না। হাটে অতিরিক্ত লোক সমাগম হয়। আর এখন অতিরিক্ত লোক সমাগম হওয়া একদম বারণ। করোনা ভাইরাসের কারণে আজ অনেকদিন আমরা ঘরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি। তোমার স্কুল ও বন্ধ। তাইনা? তোমার পড়াশোনা চলছে এখন অনলাইনে। ঠিক কিনা?
তোহা দাদুর কথায় মাথা নাড়লো।
তাহলে এ কুরবানির পশুটা ও আমাদের ঘরে বসে কিনতে হবে। এবং অনলাইনে। বাবা, চাচ্চু ঐ কথাই বলছিলো। এ ভাইরাসটা যতোদিন থাকবে ততোদিন আমাদের সাবধানে থাকতে হবে দাদুভাই।
তোহা’র মনটা হালকা হলো দাদুর কথায়। অনেক খুশী। বাবাকে গিয়ে বললো- বাবা গরু কিন্তু আমিই পছন্দ করবো। তুমি বা ছোট চাচ্চু না। চাচ্চুকে বলে দিও।
ছেলের কথায় কায়সার হাসলো একটু।
তোহার পছন্দ মতো লাল সাদার মিশ্রণে ইয়া বড় এক গরু চলে আসলো। তোহা নীচে নেমে দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই। কায়সার ছেলের কথামতো গরুর গলায় পড়ানোর জন্য মালা আনিয়ে রাখলো। গরু যা যা খায় সব আনলো কিনে। গরু আসতেই হৈহৈ করে মালা পড়িয়ে দিলো। খৈল ভুষি মেখে পানিতে তা খেতে দিলো। সাথে আছে তার নিত্য সঙ্গী বুলু। বুলু আবার এসব ভালোই পারে। পশুপাখির প্রতি তার আলাদা একটা দরদ। তোহা বুলুর সাথে থেকে থেকে এ অভ্যেসটা পেয়েছে। ঈদের যে কয়দিন বাকি তোহাকে আর বাসায় পাওয়া যাবে না। সারাদিন গরুর পিছনে পড়ে থাকবে।
ছেলের এসব কান্ড কারখানায় রুহানি প্রচুর বিরক্ত হলেও বুলু’র আশ্বাসে দমে যায় আবার।
থাক খালাম্মা এমন কইরেন না। ছোট মানুষ ভাই আমার। একসময় এসব আর থাকব না। নিজের মতন ব্যস্ত হইয়া পড়বো।
ঈদের দিন আসলে তোহা’র মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো প্রতিবারের মতো এবারও। প্রিয় গরুটার কোরবানি সহ্য করতে পারেনা তোহা। যখন থেকে বুঝতে শিখলো। তখন থেকেই এরকম মন খারাপ হয় তোহা’র।
রুহানি ছেলেকে কোরবানির উদ্দেশ্য বুঝাতে তৎপর হয়। তোহা খানিক বুঝতে পারে খানিক পারেনা। মা যে তাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলছে এটা বুঝতে পারলো। তাই মন দিয়ে মায়ের কথা শুনলো।
ছোট চাচ্চু বাবার সাথে নীচে থাকলো পুরোটা সময়। যতক্ষণ না কোরবানি শেষ হলো। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো আর মাঝে মাঝে বুলুর সাথে সাথে বকবক করতে থাকলো। বুলুটা সহ্য করতে পারে এসব।
কাজের বুয়া দারোয়ান ড্রাইভার বুলু সবাইকে কোরবানি’র মাংস দিতে দেখে তোহা বেশ খুশি হয়। গেইটে আগত অনেক ফকিরকেও বাবা মাংস বিলি করে। ফুপুদের জন্য ছোট্ট চাচ্চু গাড়ীতে করে মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে। আরও অনেককে দিতে হবে। দাদু বসে বসে হিসাব করে। এসব দেখে তোহা বুঝতে পারে কোরবানিটা শুধু নিজের জন্য না।
সবাইকে নিয়ে কোরবানির ঈদ। সব আত্মীয় স্বজন বুয়া ড্রাইভার দারোয়ান বুলু সব্বাই আমরা একসাথে ঈদের খুশি উদযাপন করি এবং আনন্দিত হই। তোহার ছোট্ট শিশু মনটা আনন্দে ভেসে যায় এসবে।