তেল নিয়ে তেলেসমাতি আর নয়

15

 

দিনের পর দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের বাজার দর। চিনি, চাল, আটা, ডাল, মসল্লাসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি শাক-সবজি, মাছ-মাংস প্রতিটির দাম আকাশচুম্বি। শীত মৌসুমেও শাক-সবজির বাজারে কোনভাবেই মূল্য কমানো যায় নি। বাজার দরের সাথে সাধারণ মানুষের আয়ের হিসাব মিলানো এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নি¤œ আয়ের অসহায় গরিবের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এরমধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার দর আরেক দফা বাড়ানোর প্রস্তাব- এমন খবরে পর প্রস্তাব পাস হবার আগেই বাজারে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের দাম। তেল নিয়ে তেলেসমতি কখন যে শেষ হবে-সঠিক উত্তর পাওয়াও দায়। দৈনিক পূর্বদেশে বুধবার প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে উল্লেখ করা হয়, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোজ্যতেলের দাম আট টাকা বাড়ার মাত্র বিশদিনের মাথায় আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তেলের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। রমজানের মাত্র একমাস আগে নিত্য প্রয়োজনীয় এ রান্না উপকরণের মূল্যবাজারে এমন অস্বাভাবিকতা ভোক্তাদের জন্য চরম দুর্ভোগ বয়ে আনবে।
সূত্র জানায়, গত ৬ ফেব্রæয়ারি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার বোতলজাত সোয়াবিন তেলের দাম প্রতিলিটারে ৮ টাকা বৃদ্ধি করেছে। ওইসময় এ নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। এরপর মাত্র বিশ দিনের ব্যবধানে পরিশোধনকারীরা আবারও প্রতি লিটারে ১২ টাকা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করলে মুনাফাদারীরা মজুদের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে তেলের আমদানি এবং পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সরবরাহ কমে দেয়ায় বাজার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভোজ্যতেলের বাজারে রীতিমত নৈরাজ্য চলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বারবার এদেশের ব্যবসায়ীরা বাজারে দাম বাড়াচ্ছে। বাস্তবে বিশ্ববাজারের সাথে বাংলাদেশের বাজারদরের কোন সম্পর্ক নেই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। ইচ্ছেমত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের সাধারণ মানুষ বাজারের এ অস্থরতা থেকে মুক্তি চায়। সামনে রমজান তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজার এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এর লাগাম টানা সম্ভব হবে না।
আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, ইতোমধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ টিসিবির গাড়ি থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ট্রাকে। মারামারির ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। এঘটনা আমাদের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার মত দীর্ঘ মহামারি এবং নানা বিধিনিষেধের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোই বেশি বিপদে পড়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই কাজ হারিয়েছেন। ছোটখাটো অনেক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা পথে বসেছেন। এর পাশাপাশি প্রতিদিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। এ অবস্থায় মানুষের অসহায়ত্বও বাড়ছে। সরকারের কাছ থেকে এই অসহায় মানুষগুলোর যে সহায়তা পাওয়ার কথা, তার খুব সামান্যই পেয়েছেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, হতদরিদ্র তো বটেই, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। এরমধ্যে টিসিবির অবস্থা হয়েছে ‘সাধ আছে, সাধ্য নেই’। যত মানুষ ট্রাক ও দোকানের সামনে ভিড় করছেন, তাঁদের সবাই পণ্য পাচ্ছেন না। পূর্বদেশের খবর অনুযায়ী, নগরীর ১৭টি স্থানে ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করেছে টিসিবি। কিন্তু ৪১টি ওয়ার্ডের ৭০ লক্ষাধিক অধিবাসীর এ নগরীতে ১৭টি টিসিবির ট্রাক মোটেই পর্যাপ্ত নয়।
এছাড়া গ্রাহকের তুলনায় পণ্য কম, আর যথাসময়ে ট্রাক নির্দিষ্ট স্থানে না আসায় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই অবস্থায় টিসিবি ট্রাকগুলো নিয়ম মেনে যথাস্থানে চলে আসা জরুরি। আর সরকারের উচিত টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া, নচেৎ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। টিসিবি’র সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারদর কমানোর দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি।