তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে

12

দীর্ঘদিন ধরে তেল-গ্যাসসহ জ্বালানি সংকটে ভুগছে দেশ। বিশেষ করে রাশিয়া- ইউক্রেনের যুদ্ধকে কন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সংকট তীব্রতর হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশে। বেড়েছে জ্বালানী মূল্য। সেইসাথে মুদ্রাস্ফীতির বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি কুপের সন্ধান ও খননে মনোযোগ দেয়া জরুরি। কিন্তু গত দুই দশকে দেশের জ্বালানি খাত তেমন গুরুত্ব পায়নি। জ্বালানির চিন্তা না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে বিদ্যুৎ খাত এগিয়েছে অনেক। এরপর দেখা দিয়েছে জ্বালানির সংকট। দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে গেছে সরকার। ডলার সংকটের চাপে পড়ে এখন দেশীয় গ্যাসের জন্য হাহাকার করছে। ‘গ্যাস চাহিদা-সরবরাহ পরিস্থিতি : দেশীয় খনিজ সম্পদ উৎপাদন বাড়াতে ত্রিমাত্রিক জরিপের সুযোগ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার’ শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পেট্রো সেন্টারে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং ডলারের ঘাটতির মধ্যে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর আওতায় ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি নতুন এবং পুরোনো কূপ খনন করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সেমিনারে আশার কথা জানান। তিনি বলেন, ১০০টি কূপের মধ্যে বাপেক্স ৫২টি নতুন কূপ খনন করবে এবং বিদ্যমান ১৬টি কূপের সংস্কার করবে। এছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ৯টি নতুন কূপ খনন করবে এবং পুরাতন সংস্কারপূর্ণ ১২টিতে খননকাজ চালাবে এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড ৮টি নতুন কূপ খনন করবে এবং পুরনো ৩টিতে সংস্কারকাজ চালাবে বলে জানান তিনি। ইতোমধ্যে ১০টি কূপ সফলভাবে খননের মাধ্যমে দৈনিক ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেড়েছে বাংলাদেশে। বর্তমান সরকার দেশে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। সাফল্যও পাচ্ছে। কিছুদিন আগে সিলেটের জৈন্তাপুরের গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ খনন করে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে সব শেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিল। সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। এরপর প্রায় ছোট-বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে তেলের অস্তিত্ব সহসা পাওয়া যায়নি। আমরা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখছি, অনেক আশা নিয়ে নতুন নতুন গ্যাস ও তেলের ক্ষেত্র আবিষ্কারের খবর জানানো হয়। কিন্তু যে পরিমাণ মজুতের কথা বলা হয়, সে অনুপাতে উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াও দরকার। মজুত এবং প্রাপ্তির ব্যবধান দূর করার দিকে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ দেয়া জরুরি। হরিপুরে যেটা পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে কিন্তু নিয়ম মেনে তেল তোলা হয়নি। শুধু যতদিন প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসছে, ততদিন তোলা হয়েছে। কিন্তু তারপর তেলক্ষেত্র সংস্কার করা হয়নি। গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই হাল। বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে, তা দিয়ে আনুমানিক ৯ থেকে ১০ বছর চলবে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খোঁজা জরুরি। বর্তমান জ্বালানির চাহিদা মেটানো যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।